বৈশাখে ইলিশের বাজারে আগুন

.
.

বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাজারগুলোতে ইলিশের চাহিদা কয়েক গুণ বাড়লেও চাহিদা অনুযায়ী আমদানি নেই। সামান্য পরিমাণ যে ইলিশ পাইকারি বাজারে আসছে, তার মূল্য আকাশছোঁয়া। পাইকারি বাজারে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে ইলিশের মূল্য। তাই সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশ। গতকাল বরিশাল নগরীর প্রধান মৎস্যকেন্দ্র পোর্ট রোডে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বুধবার সকালে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা গেছে খুচরা ও পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়। তবে ক্রেতাদের তুলনায় মাছের পরিমাণ খুব কম। সাধারণ ক্রেতারা দরদাম করছেন কিন্তু আকাশছোঁয়া মূল্যের কারণে অনেকেই ইলিশ না কিনে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
মো. শহীদুল্লাহ নামের এক সরকারি চাকরিজীবী ইলিশ কিনতে এসে দাম শুনে হতাশা প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানদের আবদারে নগরীর পাইকারি বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু মূল্য শুনে মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা! এই দাম দিয়ে ইলিশ কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।’
পোর্ট রোডের আড়তদার মাসুম শিকদার বলেন, পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে প্রতিদিন যেমন ইলিশের চাহিদা বাড়ছে, তেমনি দাম বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আমদানি কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
আড়তদারেরা বলেন, পাইকারি বাজারে ৪০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশের আগে কেজিপ্রতি দাম ছিল ৩০০ টাকা, এখন তা ৬০০-৭০০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের আগে কেজিপ্রতি দাম ছিল সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, এখন তা ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার ১ কেজি আকারের ইলিশ আগে বিক্রি হতো ১৫০০ টাকায়, এখন তা হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। আমদানি কমে যাওয়ার কারণে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় শ মণ ইলিশ আসছে। আগে যেখানে এক থেকে দেড় হাজার মণ আসত।
গতকাল বুধবার পাইকারি বাজারে ৫০০ গ্রামের ওপরে ওজনের মাছ মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়, আগে তা ছিল ২২-২৪ হাজার টাকা। ৬০০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের মাছ বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫৫ হাজার টাকা, আগে তা ছিল ২৬ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ গতকাল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আগে এই ওজনের মাছের মণপ্রতি মূল্য ছিল ৬০-৬৫ হাজার টাকা।
পোর্ট রোডের মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই বরিশালের কয়েকটি নদীতে বর্তমানে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। তার ওপরে অন্যান্য নদ-নদীতেও তেমন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আর নববর্ষ উপলক্ষে ইলিশের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। সব মিলিয়ে এখন ইলিশের বাজার খুব চড়া।
অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ইলিশের মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও ইলিশের তেমন আমদানি নেই। গত মঙ্গলবার এই কেন্দ্রে মাত্র ৮ মণ ২০ কেজি ইলিশ এসেছে। গত সোমবার ৪ মণ ৩০ কেজি, রোববার ৬ মণ, শনিবার ৬ মণ ১০ কেজি ও শুক্রবার ৬ মণ ৫ কেজি ইলিশ এখানে এসেছে।
বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের টালি সহকারী মো. জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ ১ লাখ ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। এ ইলিশের চাহিদা খুব বেশি। তবে তা খুব একটা মিলছে না।
আড়তদার বাবু রাম কর্মকার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আগের বছরগুলোতে এই সময়ে ইলিশের আমদানি ভালোই ছিল। কিন্তু এবার এতটাই কম যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারে মন্দা। আর মানুষ বৈশাখে একটু ইলিশ খাবে, সে অবস্থাও নেই। কারণ, আমদানি কম হওয়ায় মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ। এই অবস্থায় এবারের নববর্ষ ইলিশ ছাড়াই উদ্যাপন করতে হবে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কার্যালয়ে ইলিশবিষয়ক কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস বলেন, বরিশাল, ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনা ও কালাবদর নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা চলবে। এ ছাড়া অন্যান্য নদীতেও তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। তার ওপরে মৎস্য বিভাগের অভিযান সব মিলিয়ে সরবরাহ কম থাকায় বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা বাড়তি।