বাল্যবিবাহ করতে গিয়ে পালাল দুই বর

বাল্যবিবাহ ঠেকানোর সাহস দেখানোয় নান্দাইলে পুরস্কৃত সাত ছাত্রীর ছয়জন l প্রথম আলো
বাল্যবিবাহ ঠেকানোর সাহস দেখানোয় নান্দাইলে পুরস্কৃত সাত ছাত্রীর ছয়জন l প্রথম আলো

বাল্যবিবাহ করতে এসে প্রশাসনের আসার খবর পেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালিয়েছে বর। গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়ার আদমদীঘি এবং আগের দিন বুধবার সিরাজগঞ্জ সদরে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে আইন অমান্য করে বাল্যবিবাহ নিবন্ধনের দায়ে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় এক কাজিকে দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গ্রামবাসী জানিয়েছে, আদমদীঘি উপজেলার কড়ই গ্রামের বাসিন্দা জলিল হোসেনের ছেলে প্রবাসফেরত মোস্তাকিন হোসেনের সঙ্গে একই এলাকার তিলোছ ইসলামপুর (শিববাটি) গ্রামের ১৬ বছর বয়সী দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল গতকাল বিকেলে। বরযাত্রীও চলে আসে কনের বাড়ি। খবর পেয়ে কনের বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে যান আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা পারভীন। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে বর ও বরযাত্রী বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যায়। পরে আঠারোর আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না মর্মে কনের বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নেন ইউএনও।

থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসীর
সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ফুল বয়রা গ্রামের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়ের সঙ্গে পাশের খাগা গ্রামের নাজমুল ইসলামের গত বুধবার রাতে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। গোপনে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে রতনকান্দি ইউনয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, সদর থানার এসআই আবদুল বারিক, স্থানীয় ইউপি সদস্য হিরণ ঘটনাস্থলে হাজির হন। এ সময় কৌশলে বর, বরযাত্রী ও কনের বাবা পালিয়ে যান।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কালেঙ্গা গ্রামের মৌলা মিয়ার বাড়িতে তাঁর ১৭ বছরের ছেলে রিপন মিয়ার সঙ্গে সিলেটের জাফলংয়ের এক মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হয় গতকাল বিকেলে। মেয়ের বয়স ছিল ১৫। বিয়ের নিবন্ধন করেন সদর উপজেলার কাজি আবদুল্লাহ আল মামুন। কেন্দুয়ার ইউএনও মুহাম্মদ মুতাসিমুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পুলিশ নিয়ে হাজির হলে বর ও কনের মা-বাবা সটকে পড়েন। পুলিশ সন্ধ্যায় কাজিসহ বর-কনেকে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে আসে। ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কাজি আবদুল্লাহ আল মামুনকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেন। কিশোর-কিশোরী মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়।

‘ঘাসফুল’–এর সদস্যরা পুরস্কৃত

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, বাল্যবিবাহ ঠেকানোর সাহস দেখানোয় ময়মনসিংহের নান্দাইলের ‘ঘাসফুল’ সংগঠনের সাত সদস্যকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। নান্দাইল উপজেলা পরিষদ চত্বরে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও কনফারেন্স প্রচারের জন্য তৈরি করা মঞ্চে ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার ঘোষণা করেন নান্দাইলের ইউএনও মো. হাফিজুর রহমান। ঘাসফুলের সাত সদস্য হচ্ছে নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তুলি দেবনাথ, সানজিদা ইসলাম, স্নেহা বর্মণ, দশম শ্রেণির জেবুন্নেছা খানম, জান্নাতুল ইসলাম, রিজুয়ানা তাবাসসুম ও জেরিনা সুলতানা। গত বুধবার প্রথম আলোয় ‘নান্দাইলে বাল্যবিবাহ ঠেকাল সাত ছাত্রী’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।