আইসিডিডিআরবিতে প্রতি ঘণ্টায় ২০ ডায়রিয়ার রোগী

গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে ঢাকায়। মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে নানা বয়সী মানুষ। সেখানেই ছোট্ট এই শিশুটিকে স্যালাইন খাওয়ানোর ছবিটি তুলেছেন আবদুস সালাম
গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে ঢাকায়। মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে নানা বয়সী মানুষ। সেখানেই ছোট্ট এই শিশুটিকে স্যালাইন খাওয়ানোর ছবিটি তুলেছেন আবদুস সালাম

গরমের কারণে রাজধানী ও এর আশপাশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ঢাকার হাসপাতালে ডায়রিয়া ও কলেরা রোগী ভর্তি বেড়েছে। গত তিন দিনের হিসাবে দেখা গেছে, ঘণ্টায় ২০ জনের মতো রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কলেরার রোগী।
পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সর্বস্তরের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গণমাধ্যম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত হবে মানুষকে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাখালীর আইসিডিডিআরবির হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সী রোগীরা আসছে। এম রাকিব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সকাল থেকে ১০ বার পাতলা পায়খানা ও কয়েকবার বমি হয় তাঁর। বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতালে পৌঁছানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার রাস্তার পাশের দোকান থেকে পুরি খাওয়ার কারণে সম্ভবত এই অসুখ হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের নূপুরের বয়স নয় বছর। কয়েকবার পাতলা পায়খানা ও বমি হওয়ার পর নূপুরের মা তাকে এই হাসপাতালে এনেছেন। নূপুরের মা বললেন, ‘গতকাল বনরুটি খেয়েছিল নূপুর।’
ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেছেন, সারা বছর ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছে। তবে কয়েক দিনের গরম আবহাওয়ার পরপরই রোগী বাড়ছে। সোম ও মঙ্গলবার যথাক্রমে ৫০৩ ও ৫৩৩ জন রোগী ভর্তি হয়। বুধবার ভর্তি হয় ৪৯৪ জন। গতকাল বেলা দুইটা পর্যন্ত ২৫৯ জন ভর্তি হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬৭ জন।
হাসপাতালের প্রধান আজহারুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, রোগীদের ৪০ শতাংশ শিশু, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কলেরার রোগী। তিনি বলেন, রাজধানীর প্রায় সব এলাকা থেকে রোগী এলেও বাড্ডা, তেজগাঁও ও যাত্রাবাড়ী থেকে রোগী বেশি আসছে।
গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে জানানো হয়, গত কয়েক দিনে দেশের কয়েকটি জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে আছে কুমিল্লা, পাবনা, বগুড়া ও যশোর।
করণীয়
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আজকাল ডায়রিয়া বা কলেরায় মৃত্যু কম। কিন্তু আক্রান্ত হলে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে, কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই সরকার ও গণমাধ্যমের উচিত ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।
বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ও বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এস কে রায় বলেন, হাত না ধুয়ে কোনো কিছু বা বাসি, পচা খাবার খাওয়া যাবে না। বারবার পাতলা পায়খানা হলে, বমি হলে ঝুঁকি না নিয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীকে ভর্তি হতে হবে। পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু বেশি ছড়ায়। তাই পানি ফুটিয়ে পান করা সবচেয়ে নিরাপদ।