ইউপি নির্বাচনে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ২

পিরোজপুরের নাজিরপুরে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কয়েকজন সমর্থকের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের মধ্য জয়পুর গ্রামে গতকাল শুক্রবার রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

শ্রীরামকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী উত্তম কুমার মৈত্র অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমানের লোকজন হিন্দু-অধ্যুষিত মধ্য জয়পুর গ্রামে হামলা চালিয়ে ভোটারদের মারধর ও একটি চায়ের দোকানে অগ্নিসংযোগ করেন। এ ঘটনায় গতকাল রাতে উত্তম কুমার মৈত্র বাদী হয়ে আলতাফ হোসেন ব্যাপারীকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি করে স্থানীয় থানায় মামলা করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমানের চাচা শ্রীরামকাঠি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলতাফ হোসেন ব্যাপারী, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ব্যাপারী ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল ব্যাপারীর নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন লোক ধারালো অস্ত্র নিয়ে মধ্য জয়পুর গ্রামের চিত্র রঞ্জন মাতা, সজল মাতা ও প্রদীপ মাতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর করেন। এ সময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। এর মধ্যে চিত্র রঞ্জন মাতা (৬০), পরিতোষ মালী (৩২), গীতা রানী ঢালি (৬০) ও জ্যোৎস্না মালীকে (৫০) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ব্যাপারী ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করেছে। সাইফুল ও এনামুলকে গ্রেপ্তারের পর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মিজানুর রহমানের সমর্থকেরা মধ্য জয়পুর গ্রামে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক সত্যেন মজুমদারের চায়ের দোকানে অগ্নিসংযোগ করেন।

মধ্য জয়পুর গ্রামের নিরঞ্জন মালীর ভাষ্য, গতকাল রাতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমানের লোকজন চিত্র রঞ্জন মাতার বাড়িতে গিয়ে আনারস প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধ্য জয়পুর ও উত্তর জয়পুর গ্রামের হিন্দুধর্মালম্বী ১৯ জন ব্যক্তি জানান, শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের মধ্য জয়পুর ও উত্তর জয়পুর গ্রাম নিয়ে গঠিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই হাজার ৩৯৬ ভোটারের মধ্যে ৭০ শতাংশ হিন্দু। হিন্দুরা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক। এ কারণে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমানের লোকজন হিন্দু ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, যাতে হিন্দুরা ভয়ে ভোট কেন্দ্রে না যান।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজন নিজেরা এ ঘটনা ঘটিয়ে আমার লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া চায়ের দোকানটি আমার নির্বাচনী কার্যালয় ছিল।’

পুড়িয়ে দেওয়া ওই চায়ের দোকানের মালিক সত্যেন মজুমদার বলেন, ‘আমার দোকানটি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো।’

নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তানভীর হাসান বলেন, আহত চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ আজ শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হিন্দু ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।