বাসের সিটিং সার্ভিস বন্ধে অভিযান আজ থেকে

ঢাকার বাস-মিনিবাসে ‘সিটিং সার্ভিস’ নামের অবৈধ ব্যবস্থা বন্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বাসমালিকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার থেকে এই অভিযান শুরু হবে।

গতকাল শনিবার বিকেলে এলেনবাড়িতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে যাত্রীদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

৪ এপ্রিল পরিবহনমালিকদের সংগঠন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস ও গেটলক প্রথা বাতিল করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু গতকালও রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস ও গেটলক বাস চলতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, এসব বাসে বিআরটিএর নির্ধারণ করা ভাড়ার তালিকা মানা হয় না। কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায় করা হয়।

বিআরটিএর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এভাবে যাত্রীদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অবৈধ। সিটিং সার্ভিস বা গেটলক বাস সার্ভিস নামে ঢাকায় কোনো বাস বা মিনিবাস চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গতকাল জিরানী-মতিঝিল, সাভার-যাত্রাবাড়ীর পথে চলা ‘লাব্বাইক পরিবহন’, মতিঝিল থেকে নবীনগর পথে চলা ‘ওয়েলকাম’ ও ‘স্বজন পরিবহন’ সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলতে দেখা গেছে। ওয়েলকাম বাসের এক যাত্রী জানিয়েছেন, এই বাসে উঠলেই সর্বনিম্ন ১০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। ফার্মগেট থেকে আসাদগেট বা শ্যামলী গেলে দিতে হয় ১৫ টাকা। জানা গেছে, বিআরটিএর ভাড়ার তালিকা অনুসারে ফার্মগেট থেকে কলেজগেট পর্যন্ত দূরত্ব ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার। এই দূরত্বে বাসটির ভাড়া হবে ৭ টাকা।

এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণসহ পরিবহন খাতের সমস্যা সমাধানে গতকাল বিকেলে এলেনবাড়িতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন পুলিশ, বিআরটিএ ও মালিক-শ্রমিকনেতারা।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) নাজমুল আহসান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির পক্ষ থেকে বিআরটিএর কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বিআরটিএর পক্ষ থেকে আসাদগেট, আগারগাঁওয়ে আইডিবি ভবনের সামনে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশে, রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সামনে এবং যাত্রাবাড়ীর চাংপাই রেস্টুরেন্টের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হবে। সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হলে নির্বাহী হাকিমেরা জেল-জরিমানা করবেন। একই সঙ্গে বাসে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে রাখা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। মালিকপক্ষ বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে রাখতে সম্মত হয়েছে।

এ ছাড়া সিদ্ধান্ত কার্যকরে সমিতির পক্ষ থেকেও পর্যবেক্ষণ করা হবে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, পর্যবেক্ষক দল নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে অবস্থান নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হলে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দুর্দশা, হয়রানি ও ভাড়ার নৈরাজ্য লাঘব হবে। যাত্রীসেবার মান বাড়বে, পথে পথে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলায় বড় বাসের (ব সিরিজ) ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের (জ সিরিজ) ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা। বড় বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সাত টাকা ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা।

বাসে ভাড়ার তালিকা পাওয়া না গেলে বিআরটিএর ওয়েবসাইটে অথবা যাত্রী কল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে ৯৫৬৮৩৯৯ নম্বরে টেলিফোন করে অভিযোগ করা যাবে।