প্রথম আলো গায়েব করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর লোকেরা

.
.

লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার পাঠকেরা গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলো পাননি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও হাতীবান্ধা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান এ দুই উপজেলায় আসা প্রথম আলোর সব কপি নিয়ে গেছেন।
গতকাল প্রথম অলোর প্রথম পাতায় ‘বিপন্ন সাংবাদিক পরিবার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে মোতাহার হোসেনের রোষানলে পড়া একজন সাংবাদিকের পরিবার ও স্বজনদের তিন বছর ধরে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছিল। প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে খবর প্রকাশ করায় সায়েম সাবু নামের ওই সাংবাদিক, তাঁর মা, ভাইবোনসহ ৫৩ স্বজনকে আসামি করে ২৩টি মামলা করেছিলেন প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকজন। মোতাহার লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সাংসদ।
লালমনিরহাট-১ আসনের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা সাংবাদিক পরিবারের দুর্দশা নিয়ে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি জেনে যান। দুটি উপজেলায় সাধারণ পাঠকদের হাতে যাতে পত্রিকা না পৌঁছে, সে জন্য তাঁরা সকালের মধ্যে প্রথম আলোর সব কপি নিয়ে যান।
হাতীবান্ধা উপজেলার হকার আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দারোগা (থানার এসআই) আনিছ ফোনে আমাকে প্রথম আলোর সব কপি নিয়ে শাহ্ গরিবুল্লাহ হোটেলে যেতে বলেন। সেখানে গেলে তিনি আমার কাছ থেকে সব পত্রিকা নিয়ে নেন।’
আসাদুল আরও বলেন, ‘হাতীবান্ধার হকার শফিকুল, রমজান ও ইউনুছ আলীও সেখানে ছিলেন। তাঁরা আমাকে বলেছেন, পরে দাম দেওয়ার কথা বলে তাঁদের পত্রিকাও দারোগা নিয়ে গেছেন।’
এসআই আনিছ এলাকায় প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় সব জনপ্রতিনিধি ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে এসআই আনিছ বলেন, ‘আমি তো হাতীবান্ধা থেকে সকালে পাঁচ কপি প্রথম আলো কিনেছি।’ সব হকারকে শাহ্ গরিবুল্লাহ হোটেলের সামনে যেতে বলার কারণ জানতে চাইলে এসআই আনিছ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলায় বাকি পত্রিকা কে কিনেছে জানতে চাইলে এসআই আনিছ বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী মোতাহারের ছেলের ঘনিষ্ঠ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হামিদুল হক কিনেছেন বলে শুনেছি।’
হামিদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোর সব কপি কেনার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘কেন নিয়েছি, বোঝেন না?’
জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, হাতীবান্ধার এসআই আনিছ কেন এতগুলো প্রথম আলো নিলেন, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাতীবান্ধা থানার ওসি তাপস সরকার বলেন, ‘এসআই আনিছের কাছে আমি বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছেন, আজকের সংবাদে তাঁর বিষয়ে কথা আছে। তাই তিনি পাঁচ কপি কিনেছেন।’
পাটগ্রামের প্রথম আলোর এজেন্ট হামিদুল ইসলাম জানান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন গতকাল বেলা ১১টার দিকে পাটগ্রাম স্টেশন থেকে প্রথম আলোর ৪২০ কপি কিনে নেন। এত পত্রিকা কেনার কারণ জানতে চাইলে মোফাজ্জল তাঁকে বলেন, ‘প্রথম আলো এইগুলো কী লেখে?’
পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া বাজারের হকার খলিল উদ্দীন বলেন, ‘পরে টাকা দেবেন বলে প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা সাব্বির আমার কাছ থেকে ৩৫ কপি প্রথম আলো নিয়ে গেছেন।’
লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলায় গতকাল দুই হাজার ৪৫০ কপি প্রথম আলো এসেছে। হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলা বাদে অন্য তিনটি উপজেলায় প্রথম আলো পাঠকদের হাতে পৌঁছেছে।