জঙ্গি তামিমের মরদেহ ফেরত চায় কানাডার হাইকমিশন

তামিম চৌধুরী
তামিম চৌধুরী

নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত তামিম চৌধুরীর মরদেহ তাঁর কানাডাপ্রবাসী পরিবারকে ফেরত দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কানাডীয় হাইকমিশন। এ ব্যাপারে একাধিক চিঠি লিখেও সাড়া পায়নি তারা। সর্বশেষ চিঠিতে তারা সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, কেন মরদেহ ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। অনেকবার অনুরোধ করার পরও হাইকমিশনকে তামিমের ব্যাপারে কেন কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারেও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
ঢাকার কানাডীয় হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে হাইকমিশন জানতে পেরেছে, তামিম চৌধুরী নামে কানাডার একজন নাগরিক পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর লাশ দাফন করার জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে। এরপর থেকে নানাভাবে তারা তামিম বিষয়ে তথ্য চেয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাইকমিশনকে কিছুই জানায়নি।
চিঠিতে বলা হয়, এর আগেও হাইকমিশন তামিমের পুরো পরিচয় নিশ্চিত করতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ জানিয়েছিল। একই সঙ্গে তামিমের মরদেহের কী হবে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিল হাইকমিশন। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে। কিন্তু তারপরও হাইকিমশনকে কিছুই জানানো হয়নি।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর তামিমের লাশ ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কানাডার হাইকমিশনের এই চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তামিম নিহত হওয়ার পর পত্রিকায় ছবি দিয়ে তাঁর লাশ পরিবারকে নিতে বলা হয়েছে। যখন কেউ নেয়নি, আমরা আঞ্জুমান মুফিদুলে লাশ হস্তান্তর করেছি। এখন তাদের যদি প্রয়োজন হয়, সেখান থেকে নিয়ে যাবে, এটা নিয়ে এত ব্যাখ্যার কী আছে?’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার আগেও বেশ কয়েক দফা কানাডার সরকার তামিমের বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তামিম চৌধুরীর বিষয়ে আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তার বেশির ভাগই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া। কানাডা সরকার এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করেছে। তাহলে আমরা তাদের কী তথ্য দেব?’ তিনি বলেন, তামিম নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও এর সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা ও প্ররোচনা দিয়েছেন। তাঁর বাবার নাম শফিক আহমেদ চৌধুরী। পৈতৃক বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার বড়গ্রাম ফাদিমাপুরে। ১৯৮৬ সালে তামিমের জন্ম হয়।
সিলেটে থাকা তামিমের আত্মীয়রা এর আগে প্রথম আলোকে বলেছেন, তামিম তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বাংলাদেশে পড়েছেন। এরপর মা-বাবার সঙ্গে কানাডায় চলে যান। সেখানেই বড় হন। তাঁর মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই কানাডায় বসবাস করেন। পুলিশ বলছে, তামিম চৌধুরী ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশে আসেন।
গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় এক জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হন তামিম চৌধুরী। পুলিশ বলছে, এই তামিম গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী।
নারায়ণগঞ্জে অভিযানের দিন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, তামিম চৌধুরী সিরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তামিম গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএসের কথিত ‘বাংলার খিলাফত দলের প্রধান’ শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। তাঁর প্রকৃত নাম তামিম চৌধুরী। তিনি কানাডা থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। তামিম চৌধুরী কানাডার পুলিশের কাছে ‘হয়রানির’ শিকার হয়েছেন অভিযোগ তুলে বাংলাদেশে চলে গেছেন। তামিম চৌধুরী ২০১২ সালে সিরিয়ায় যান। পরের বছরই ২০১৩ সালের অক্টোবরে তামিম চৌধুরী বাংলাদেশে আসেন।