শাবাশ 'ঘাসফুল'

আবারও বাল্যবিবাহ ঠেকাল সাত স্কুলছাত্রীর সংগঠন ‘ঘাসফুল’। তাদের উদ্যোগে গতকাল রোববার সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেল। এর আগে ১১ এপ্রিল তারা এক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছিল। এই সাহসী কাজের জন্য স্থানীয় লোকজন তাদের সাধুবাদ জানিয়েছে।

ঘাসফুলের সদস্যরা সবাই ময়মনসিংহের নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। তাদের চারজন অষ্টম শ্রেণি এবং তিনজন নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাল্যবিবাহ ঠেকাতে এবং মেয়েদের উত্ত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এক বছর আগে ঘাসফুল গঠন করে এই সাত ছাত্রী।

প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল খালেক বলেন, ‘মেয়েগুলো পড়ালেখার পাশাপাশি ভালো কাজ করছে। পথেঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত হতে দেখলে তারা প্রতিবাদ করে।’

গত শুক্রবার ঘাসফুল খবর পায় তাদের বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে পাকাপাকি করা হয়েছে। তার বাড়ি উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের চানপুর গ্রামে। প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে এই সাত ছাত্রী পরদিন শনিবার ওই গ্রামে যায়। তারা এ বিয়ে বন্ধের জন্য অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের কথা আমলে না নিয়ে উল্টো ধমক দিয়ে চলে যেতে বলা হয়।

ঘাসফুলের সদস্য রেজওয়ানা তাবাসসুম বলে, ‘মেয়েটির বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর জেনেই আমরা প্রধান শিক্ষকের কাছে যাই। স্যার উৎসাহ ও অনুমতি দিলে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বাবা-মা ও অন্য অভিভাবকদের মেয়েকে কম বয়সে বিয়ে না দেওয়ার অনুরোধ করি। তাঁরা আমাদের কথা মানছিলেন না। বাল্যবিবাহ দিলে তাঁদের দণ্ড হতে পারে বলে বোঝানো হয়। কিন্তু বাচ্চা মেয়ে বলে বাড়ির লোকজন আমাদের কথাবার্তা আমলে নেননি।’

তাবাসসুম জানায়, পরে ঘটনাটি তারা নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমানকে জানায়। তাঁর উদ্যোগে ওই ছাত্রীর বাবাকে বাড়ি থেকে থানায় ডেকে নিয়ে আসা হয়। এরপর তিনি মেয়ের বাল্যবিবাহ দেবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়া পান।

ওই ছাত্রীর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঠিক বিয়ে নয়। আলাপ-আলোচনা চূড়ান্ত করার দিন ধার্য করা হয়েছিল।’ ছাত্রীর ভাই অভিযোগ করেন, তাঁর বোনকে রাস্তাঘাটে বখাটেরা উত্ত্যক্ত করে। তাই বাধ্য হয়েই বোনের বিয়ের কথা ভাবছিলেন তাঁরা।

গতকাল নান্দাইল মডেল থানায় গেলে ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, ইউএনওর নির্দেশ পেয়ে এলাকায় পুলিশ পাঠিয়ে ছাত্রীর বাবাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তিনি ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, অভিযোগ দিলে কথিত বখাটেদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবেন। তবে এই যুক্তিতে বাল্যবিবাহ দেওয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এলাকার ইউপি সদস্য মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, তিনি এ বিয়ের বিষয়টি জানতেন না। ছাত্রীর বাবা যেহেতু বিয়ে না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন, তাই তাঁকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।

ঘাসফুলের সদস্যরা জানায়, ১১ এপ্রিল তারা নান্দাইল পৌরসভার দশালিয়া মহল্লায় গিয়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছিল। ইউএনও এবং প্রধান শিক্ষক তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এতে তারা আরও উৎসাহিত হয়েছে।

ঘাসফুলের সদস্য সানজিদা ইসলামের মা লিজা আক্তার বলেন, মেয়েদের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন। তিনি নিজেও প্রতিবাদী ছিলেন।

উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি গাজী আবদুল সালাম ভূঁইয়া বীর প্রতীক বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আর এই মেয়েরা সমাজের নানা অসংগতি ও বৈরিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।’

নান্দাইলের সুশাসনের জন্যে নাগরিকের (সুজনের) সম্পাদক প্রভাষক অরবিন্দ পাল বলেন, ‘এটি অনুপ্রেরণামূলক। আমাদের মেয়েরা যে অনেক কিছু করতে পারে, ঘাসফুল তা দেখিয়ে দিচ্ছে।’