দুই বছরে ৬২ হাজার ঝাউগাছ বিষখালী নদীতে বিলীন

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা সংরক্ষিত বন বিলীন হয়ে গেছে। এখন হাতে গোনা কয়েকটি গাছ রয়েছে মাত্র। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা সংরক্ষিত বন বিলীন হয়ে গেছে। এখন হাতে গোনা কয়েকটি গাছ রয়েছে মাত্র। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

বিষখালী নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার হরিণঘাটা সংরক্ষিত বন। গত দুই বছরে নদীতীরে রোপণ করা প্রায় ৬২ হাজার ঝাউগাছ বিলীন হয়ে গেছে। এখন হুমকির মুখে পড়েছে মূল বনাঞ্চল।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হরিণঘাটা সংরক্ষিত বনের আয়তন প্রায় ২ হাজার একর। বিষখালী নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ২০১২ সালে এ বনের পূর্বাংশে ঝাউবাগান সৃজন করা হয়। প্রায় ৬২ একর জমিতে ৬২ হাজার ৫০০ ঝাউগাছের চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু অব্যাহত ভাঙনে গত দুই বছরে পুরো এলাকাটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঝাউবাগান। এ সময় অন্তত চার হাজার কেওড়াগাছও বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে।

বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখ সোলায়মান হাওলাদার বলেন, ‘অব্যাহত ভাঙনে বনের আয়তন অনেক কমে গেছে। এখনই ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পুরো বন ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। বিষয়টি আমরা বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে বন বিভাগের বরগুনা-পটুয়াখালী অঞ্চলের বিভাগীয় বন সংরক্ষক খগেশ চন্দ্র কর্মকার ঝাউবাগানটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ওই সময়ও কিছু ঝাউগাছ ছিল। বর্তমানে ঝাউবাগানের পুরোটাই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, হরিণঘাটা পর্যটন কেন্দ্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল এই ঝাউবাগান। বরিশাল, বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা এই বনের সৌন্দর্য দেখার এখানে আসতেন। ঝাউবাগান বিলীন হওয়ায় পর্যটকেরা আকর্ষণ হারাচ্ছেন।

স্থানীয় পাথরঘাটা কলেজের শিক্ষার্থী খাইরুল সিকদার বলেন, হরিণঘাটা পর্যটন এলাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান ছিল বিষখালী নদীর তীরের এই ঝাউবাগান। ঝাউগাছের শো শো শব্দ আর নদীর ঢেউ দারুণ আবহ তৈরি করত। এখন সেসব স্মৃতি। এতে যেমন সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে, তেমনি হরিণঘাটা সংরক্ষিত বনটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

হরিণঘাটা থেকে পর্যটকদের ঝাউবনে নিয়ে যেতেন ট্রলারচালক আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ঝাউবাগান বিলীন হয়ে যাওয়ার পর এ পথে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাঁদের আয়রোজগারেও ভাটা পড়েছে।

বরগুনা-পটুয়াখালী অঞ্চলের বিভাগীয় বন সংরক্ষক খগেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে ঝাউবাগানটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রবহমান নদীতে বাধা সৃষ্টি করতে চায় না বন বিভাগ। যে স্থানে ভাঙন নেই, সেখানে আমরা নতুন করে বনায়ন করব।’