এই সংঘর্ষ বহিষ্কৃত এক নেতার জন্য...

শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে পাঁচ মাস আগে তাঁকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। নাম আবদুল্লাহ আল কায়সার। তবে তাঁর আরও পরিচয় আছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক। তাঁকে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে সুযোগ না দেওয়ায় প্রথমে পরীক্ষার হলে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে পণ্ড হয়ে যায় পরীক্ষা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থী, পুলিশসহ ১৬ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় একটি অটোরিকশা ও ট্রাক ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম নগরে চলাচল করা শাটল ট্রেনের হোসপাইপ কেটে দেওয়া হয়। এতে শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রায়হান, মিজবাহুল ইসলাম, নাজমুস সাদাত, রকিবুল হাসান, পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলী, পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, শরিফুল ইসলাম, ইমাম হোসেন, ছাত্রলীগের কর্মী মেহেদী হাসান, রাহাত, আমিনুল ইসলাম, এমআদ উদ্দিন, রায়হান রেজা, মো. আরমান ও অভিজিৎ কর্মকার।
লাঠিপেটার বিষয়ে হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ায় বাধ্য হয়ে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১৭ অক্টোবরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আবদুল্লাহ আল কায়সারকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রলীগেরই আরেক নেতার ওপর হামলার ঘটনায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ড. ইউনূস ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে গতকাল সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী হলের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তাঁরা হলে তালা লাগিয়ে দেন। শিক্ষকদের অনুরোধে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট আগে তালা খুলে দিলেও পরীক্ষার্থীরা হলে ঢুকতে পারেননি। পরে পুলিশ এসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সরানোর চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এতে কয়েকজন আহত হন। এ সময় পুলিশ রাহাত নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। পুলিশ তালা খুলতে গেলে সেখানেও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। ইটের আঘাতে সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগের কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা আহত হন। তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে দুই শিক্ষার্থী ও চার পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নিয়েছেন।
ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। বিভিন্ন সময় বহিষ্কৃত অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বহিষ্কারের মেয়াদ শেষ না হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী কায়সারকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। বহিষ্কৃত অনেকে আগে পরীক্ষা দিতে পেরেছেন, এ তথ্য সঠিক নয়।
এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপদপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান ও সহসম্পাদক আবদুল্লাহ আল কায়সারকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে গতকাল বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
মিজানুর রহমানের অনুসারী হিসেবে আবদুল্লাহ আল কায়সার পরিচিত। সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন তিনি। ঘটনাটির সঙ্গে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
যাকে ঘিরে এত কাণ্ড সেই আবদুল্লাহ আল কায়সার অবশ্য সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার অনুমতি পেতে অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রশাসন সাড়া দেয়নি। সে কারণে পরীক্ষা শুরুর আগে তাঁর বন্ধু ও সুহৃদরা প্রতিবাদ জানাতে হলের সামনে যান।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, অন্য পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে হবে।