বিয়ানীবাজারের প্রথম মেয়র কে হচ্ছেন?

সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচন আগামী মঙ্গলবার। প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৬ বছর পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচন ঘিরে চলছে সরগরম আলোচনা। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত। কে হবেন প্রথম পৌর মেয়র?
অনেক ভোটারের মতে, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবদুস শুকুর, বিএনপির মো. আবু নাসের ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেনের মধ্যেই লড়াই হতে পারে।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবদুস শুকুর, বিএনপির মো. আবু নাসের, জাসদের শমসের আলম, স্বতন্ত্র তফজ্জুল হোসেন, আবুল কাশেম পল্লব, মুহাম্মদ জমির হোসাইন, বদরুল হক ও আমান উদ্দিন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী রয়েছেন।
এর বাইরে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার মোট ভোটার ২৫ হাজার ২৪ জন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুজন নেতা বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব এবং পৌর আওয়ামী লীগের কর্মী বদরুল হক ও আমান উদ্দিন ‘বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের কারণে জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতির মানুষ হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শুকুর কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। অন্যদিকে পৌর জামায়াতের সাবেক আমির মুহাম্মদ জমির হোসাইন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় সংকটে পড়েছেন বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবু নাসের।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন। তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করলেও তাঁর ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাকির হোসেন নিয়মিত তফজ্জুলের সমর্থনে গণসংযোগ করছেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে কয়েকজন ভোটার বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর নির্বাচন। ভোটাররা পরিবর্তন চান। এটিই তফজ্জুলের বিজয়ে বড় বাধা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস শুকুর বলেন, ‘এসব প্রার্থীর কারণে দলীয় ভোটে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের নেতৃস্থানীয় সবাই আমার পক্ষে কাজ করছেন। ভোটাররা এ নির্বাচনে পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবেন। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
বিএনপির প্রার্থী আবু নাসের বলেন, ‘বিএনপির ভোটারদের পাশাপাশি আমি সাধারণ ভোটারদের ভোটও পাব। এ ছাড়া আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী থাকার সুবিধাটুকুও আমার পক্ষে যাবে। তাই আমি বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’ জামায়াতের প্রার্থী মুহাম্মদ জমির হোসাইনের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া একাধিকবার চেষ্টা করেও স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেনের মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি বারবার ফোন করা হলেও তফজ্জুলের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেনও ধরেননি। আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আমান উদ্দিন বলেন, তিনি দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নিজের নির্বাচনী কার্যক্রম এরই মধ্যে গুটিয়ে নিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাসিব মনিয়া বলেন, ‘যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের জনসমর্থন নেই বললেই চলে। তাই কোনো সমস্যা হবে না। এর মধ্যে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ শুরু করেছেন। তা ছাড়া এটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হওয়ায় দলীয় প্রার্থী সহজেই জয় পাবেন।’
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিয়ানীবাজারকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। বিয়ানীবাজার সদর ইউনিয়ন ও মোল্লারপুর ইউনিয়নের অংশবিশেষ নিয়ে এ পৌরসভা গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তফজ্জুল হোসেন পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পান। এ অবস্থায় আইনি জটিলতায় পড়ে বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচন ১৬ বছর বন্ধ ছিল।