জঙ্গি সন্দেহে দুই ছেলেকে পুলিশে দিয়েও উদ্বিগ্ন বাবা

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার সন্দেহে গত ২৫ মার্চ দুই ছেলেকে রাজধানীর কাফরুল থানায় সোপর্দ করেছিলেন আলমগীর হোসেন। আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজির করার বিধান থাকলেও তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয় ১১ এপ্রিল। ২১ মার্চ বাড্ডা থানায় করা একটি মামলায় র‍্যাব তাঁদের গ্রেপ্তার দেখায়। এখন ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলমগীর হোসেন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

আলমগীর হোসেন ১৫ এপ্রিল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে ছেলেদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করলেও মামলার কাগজপত্রে এর উল্লেখ নেই। সরকার পুনর্বাসনের কথা বলছে। তিনি পুনর্বাসন চান না, ন্যায়বিচার চান। তিনি মনে করেন, ছেলেদের সমর্পণের বিষয়টি কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলে তাঁদের জন্য হয়তো ভালো হতো।

অবস্থাপন্ন আলমগীর হোসেনের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। দীন ইসলাম (২৫) ও সালমান সাজিদ (২২) নামের ওই দুই ছেলেই এখন বাড্ডা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন।

আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল কাজীপাড়ায় তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসে। রড, বালু, সিমেন্টের ব্যবসা। তাঁরা ঢাকার আদি বাসিন্দা। ৩৭ বছর ধরে কাজীপাড়ায় বসবাস। সেখানে পাঁচতলা পৈতৃক বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। প্রাচুর্যে থাকা আলমগীর হোসেন দুই ছেলেকেই মাদ্রাসায় দিয়েছিলেন। তবে ছেলেরা লেখাপড়া শেষ করেননি। ইব্রাহিমপুরে মাসল আর্ট জিম নামে একটি ব্যায়ামাগার করে দিয়েছিলেন। দুই ভাই সেটি দেখাশোনা করছিলেন। বাবার ব্যবসাতেও হাত লাগাতেন। বড়টি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক।

খোঁজ নিয়ে এবং আলমগীর হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন এমন সন্দেহে তিনি দুই ছেলেকে ২৫ মার্চ
বিকেলে কাফরুল থানায় নিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। এ বিষয়টি ২৫ মার্চ রাতেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মো. শামীম গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হস্তান্তরের পরপরই ওই দুজনকে আমরা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে দিয়ে দিয়েছি।’ তবে এ দুজন কবে র‍্যাবের হাতে আটক হলেন, সে সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারও কিছু জানে না।

দীন ইসলাম ও সালমান সাজিদকে ২১ মার্চ বাড্ডা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়, সেটির তদন্ত করছে র‍্যাব-১০। র‍্যাব-১০-এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর প্রথম আলোকে বলেন, সালমান সাজিদ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলার আসামি। পুলিশের জিম্মায় দেওয়ার পর পুলিশ কথাবার্তা বলে তাঁদের ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর র‍্যাব ওই দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে।

এই অবস্থায় উদ্বেগে আছেন আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই যে আমি ভরসা করে ছেলেদের পুলিশে দিলাম, কী লাভ হলো? আমার ছেলেদের আদালতে পাঠানো হলো ১১ এপ্রিল। আপনি কি মনে করেন, এমন হলে আর কোনো বাবা ছেলেদের নিজ উদ্যোগে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন?’ তিনি বলেন, ছেলেদের সোপর্দ করার পর থেকে তাঁর স্ত্রী একরকম শয্যাশায়ী। প্রায়ই স্ত্রীর কান্নার শব্দে তাঁর ঘুম ভাঙে। তবু নিজের কর্তব্যবোধ থেকে ছেলেদের পুলিশে সোপর্দ করেছেন।

ছেলেদের পুলিশে দিলেন কেন, এ প্রশ্নে আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেরা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন এমন একটা সন্দেহের কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছিল। তখনই তিনি ছেলেদের পুলিশে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ২১ মার্চ র‍্যাব-১০-এর একটি দল কাজীপাড়ায় তাঁর প্রতিবেশীদের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখান থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থীসহ চার তরুণকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দুই ছেলে হঠাৎ আত্মগোপনে চলে যায়। ওই চার তরুণ জিজ্ঞাসাবাদে দীন ইসলাম ও সালমান সাজিদের নাম বলেছে বলে র‍্যাব তাঁকে জানিয়েছিল। এরপর তিনি ছেলেদের খুঁজে বের করে পুলিশে দেন।

পুলিশ ও র‍্যাব বলছে, দীন ইসলাম ও সালমান সাজিদ দুজনেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। ২১ মার্চ গ্রেপ্তারকৃতরা সাজিদের নাম বলেছেন। সে সময় র‍্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, দলটি কোনো সরকারি স্থাপনায় হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

পুলিশ বলেছে, ওই দুই ভাই ‘হিযরত’ (বাড়ি ছাড়ার) করার পরিকল্পনা করছিলেন।