আল-কায়েদার বাংলাদেশবিষয়ক প্রধান নিহত!

আল–কায়েদার বাংলাদেশবিষয়ক প্রধান তারিক ওরফে সোহেল ও তাঁর পাঁচ সহযোগী আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিহত হয়েছেন বলে এক অডিও বার্তায় দাবি করেছে আল–কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) প্রধান অসিম ওমর।

গত মঙ্গলবার ইন্টারনেটনির্ভর যোগাযোগ অ্যাপ টেলিগ্রামে এ অডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়। পরে এর ইংরেজি লেখ্য ভাষ্যও প্রকাশ করা হয়। তবে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৈরি কোনো নিখোঁজ তালিকায়ও তারিক ওরফে সোহেল নামটি ছিল না।

১৩ পৃষ্ঠার ওই ইংরেজি বক্তব্যে একিউআইএস প্রধান অসিম ওমর বলেন, আল-কায়েদার বাংলাদেশবিষয়ক প্রধান তারিক ওরফে সোহেল আফগানিস্তানের কান্দাহারের মরুভূমিতে প্রাণ দিয়েছেন, যিনি ঢাকার চাকচিক্য ছেড়ে ওয়াজিরিস্তানে এসেছিলেন বাংলাদেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা নিয়ে আসার আশায়। সোহেলের সঙ্গে তাঁর সহযোগী কারি আবদুল আজিজ ওরফে আবদুল হালিম, ইয়াকুব ওরফে সাদ্দাম হোসেন, আসাদুল্লাহ ওরফে নাজিমউদ্দীন মাইমুন, আবু ইব্রাহিম ওরফে সাইফুল ইসলাম হাসান এবং আবু বকর ওরফে আনুজ হাসিব নিহত হয়েছেন। ওই বার্তায় আরও বলা হয়, ‘সম্প্রতি আরও প্রচুর মুজাহিদিন নিহত হয়েছে।’

সম্প্রতি আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে। এর মধ্যে ১৩ এপ্রিল আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ নানগরহারের আচিন জেলায় ৯ হাজার ৮০০ কেজি ওজনের বোমা (মাদার অব অল বোমস্‌) বর্ষণের ঘটনায় ৯৪ জন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়।

তবে অসিম ওমরের বক্তব্যে কথিত বাংলাদেশি তারিক ওরফে সোহেল ও তাঁর পাঁচ সহযোগী ঠিক কত তারিখে নিহত হয়েছেন, সেটা উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, তারিক ওরফে সোহেল নামে কেউ আল-কায়েদার বাংলাদেশবিষয়ক প্রধান ছিলেন, এমন তথ্য তাঁদের জানা নেই। তাঁর পুরো পরিচয়ও জানেন না কর্মকর্তারা। অডিও বার্তায় উল্লেখিত তারিকের সহযোগীরাও কেউ বাংলাদেশি কি না, তা–ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কোনো কোনো কর্মকর্তা বলেছেন, এমনও হতে পারে, নিহত ব্যক্তিদের সাংগঠনিক বা ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আফগানিস্তানের কান্দাহারে সম্প্রতি কোনো বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, এ রকম বিষয় এখনো তাঁদের জানা নেই।

যোগাযোগ করা হলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক ইলাহি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশের জঙ্গিদের একটা অংশের উত্থান। আর সিরিয়ায় যদি যুদ্ধ করতে বাংলাদেশ থেকে যেতে পারে, তাহলে আফগানিস্তানেও যেতে পারে। এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে তদন্ত করে এর সত্য-মিথ্যা যাচাই করা।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নিজেদের আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলাদেশ শাখা বলে দাবি করে। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্লগার ও ভিন্নমতাবলম্বী লেখক-প্রকাশকদের হত্যার জন্য আনসার আল ইসলামকে দায়ী করা হয়। এই জঙ্গিগোষ্ঠীর কথিত সামরিক প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নাম এসেছে। ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ পুরস্কার ঘোষণা করেও এখন পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।