হেরেও লড়াই করতে চান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুদীপ

সুদীপ দাস
সুদীপ দাস

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুদীপ দাস এবার জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিতে পারছেন না। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএসসি) বলছে, সুদীপের বিষয়ে তারা পুরোপুরি সহানুভূতিশীল থাকলেও বিদ্যমান বিচারব্যবস্থা ও বিচারকদের কাজের ধরনের কারণে তাঁকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে সুদীপ দাস বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতে যাবেন।
জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল মামুন আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, প্রথম আলোয় বুধবার ‘প্রতিবন্ধী বলে তাঁকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না বিজেএসসি। আমি কি তবে হেরে যাব?’ শিরোনামের সংবাদটি কমিশনের গোচরীভূত হয়েছে। কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যানসহ একাধিক সম্মানিত সদস্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বিষয়ে কমিশনের বক্তব্য হলো, বিচারকদের কাজের ধরন ও প্রকৃতি বিবেচনায় একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর পক্ষে বিচারিক আদালতের দায়িত্ব পালন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশে বিদ্যমান বিচারব্যবস্থা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, একজন জজ বা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এমন কিছু বিচারিক দায়িত্ব রয়েছে, যে ক্ষেত্রে বিচারকের নিজের দৃষ্টিশক্তি ন্যায়বিচারের সঙ্গে অপরিহার্য। তাই একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর পক্ষে আইনানুগভাবে বিচারিক কর্ম সম্পাদন করা প্রায় দুরূহ। সে কারণে জুডিশিয়াল সার্ভিসের প্রবেশ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সুদীপকে যোগ্যতর বিবেচনা করা হয়নি। এ-সংক্রান্তে একটি রিট মামলাও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন আছে।

জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সুদীপ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বড় বোনের সঙ্গে কমিশনের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সচিব মহোদয় আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন। সার্ভিস কমিশন মনে করে, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা বিচারকাজ করতে পারবেন না। আমার প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অন্যান্য দেশে যদি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা বিচারক হিসেবে কাজ করতে পারেন, তাহলে আমরা পারব না কেন? আর বাংলাদেশে তো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা আইনজীবী হিসেবে আদালতে চর্চা করছেন। আইনজীবী হতে পারলে বিচারক নয় কেন? আমি বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সুদীপের শিক্ষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কোনো আইন যদি করা হয়, যাতে একজন পরীক্ষা দিতে না পারে সেটা দৃষ্টিকটু, বৈষম্যমূলক। একজন জজ নিজেই আইন লিখবেন, সে কারণেই এমন নিয়ম থাকতে পারে। কিন্তু জুডিশিয়াল সার্ভিসে উত্তীর্ণরা শুধু বিচারক কেন আরও অনেক পদে থাকতে পারে।’

সুদীপের বিষয়টি জানতে পেরে প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসের (ব্লাস্ট) পরিচালক ও আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম। তিনি বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মনে করি, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সুদীপ অবশ্যই একজন শ্রুতলেখক দিয়ে পরীক্ষার সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন। আমরা এ বিষয়ে সুদীপের পাশে আছি।’