তিন সমস্যার চক্রে জনপ্রশাসন

>

ওএসডি ২৫৭ জন, চুক্তিতে দেড় শতাধিক, তিন পদে ১৪ শ অতিরিক্ত কর্মকর্তা, ওপরের স্তরে কর্মকর্তা বেশি, নিচে কম
বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি), চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ এবং পদের মাত্রাতিরিক্ত পদোন্নতির চক্রে ঘুরছে জনপ্রশাসন। বিভিন্ন পদে দেড় শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন চুক্তিভিত্তিক। ওএসডি আছেন ২৫৭ জন, যাঁদের কাজ নেই, বেতন নেন।

মাত্রাতিরিক্ত পদোন্নতিতে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা অনুমোদিত পদের চেয়েও প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন বেশি। এর মধ্যে ২৩ এপ্রিল ২৭৭ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ওপরের স্তরে কর্মকর্তা বেশি হলেও নিচের স্তরে পর্যাপ্ত কর্মকর্তা নেই।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, মাত্রাতিরিক্ত পদোন্নতি হলে ওএসডির সুযোগ বাড়ে। এ জন্য শূন্যপদের বাইরে পদোন্নতি দেওয়া উচিত নয়। আর একেবারে অপরিহার্য না হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়া ভালো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের আছেন ২০ জন। এর মধ্যে ১৪ জন সচিব, ৫ জন অতিরিক্ত সচিব এবং ১ জন যুগ্ম সচিব। সচিবদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সুরাইয়া বেগম, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে বিকল্প নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ পাওয়া সদ্য বিদায়ী অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ, শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিব মিকাইল শিপার, নৌপরিবহনসচিব অশোক মাধব রায় প্রমুখ। বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে প্রেষণে আছেন বেসামরিক ও সামরিক মিলিয়ে হাজার খানেক কর্মকর্তা।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ও মেধাবীকে কাজে লাগাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থাকতে পারে। কিন্তু এখন অনেকাংশেই যোগ্য লোককে যোগ্য স্থানে চুক্তিতে রাখা হচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হওয়া উচিত।
জনপ্রশাসনসচিব মোজাম্মেল হক খান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, কিছু পদে যৌক্তিক ও অপরিহার্য কারণে চুক্তিতে নিয়োগ দিতে হয়।
ওএসডি ২৫৭
২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২৫৭ জন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি ছিলেন। এ রকম দুজন সচিবের মধ্যে ইবাদত আলী ২০১১ সাল থেকে ওএসডি। এ ছাড়া ১৯ জন অতিরিক্ত সচিব, ৪২ জন যুগ্ম সচিব, ১৪৫ জন উপসচিব, ৩২ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এবং ১৭ জন সহকারী সচিব ওএসডি। ন্যূনতম মূল বেতন ধরলেও গাড়ি সুবিধা ছাড়াই ওএসডি এসব কর্মকর্তার পেছনে মাসে রাষ্ট্রের খরচ হচ্ছে প্রায় দুই কোটি টাকা।
অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, একসময় বিশেষ কাজের জন্য ওএসডি করা হতো, যা ছিল সম্মানের। এখন সুনির্দিষ্ট দায়দায়িত্ব ছাড়াই প্রচুর ওএসডি করা হচ্ছে। ফলে সমস্যাও হচ্ছে, অর্থেরও যথার্থ ব্যবহার হচ্ছে না।
ওপরের স্তরে বেশি, নিচে কম
প্রশাসন ক্যাডারে মোট কর্মকর্তা সাড়ে ৫ হাজার। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত উপসচিবের প্রায় ৮৫০টি পদের বিপরীতে ছিলেন ১ হাজার ৪৯১ জন। যুগ্ম সচিবের প্রায় ৪৫০ পদের বিপরীতে ৮২৭ জন, অতিরিক্ত সচিবের এক শর কিছু বেশি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪৯২ জন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পদসংখ্যাও বাড়ানো উচিত।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ওপরের এই তিন পদে মাত্রাতিরিক্ত কর্মকর্তা থাকলেও নিচের স্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এবং সহকারী সচিব (মাঠপর্যায়ে সহকারী কমিশনার) পদে আরও কয়েক শ কর্মকর্তা প্রয়োজন। এসি-ল্যান্ডের ৪৯৮টি অনুমোদিত পদের মধ্যে প্রায় ৫০টি পদ শূন্য।
জনপ্রশাসনসচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, নিচের স্তরে কর্মকর্তার সংকট মেটাতে প্রশাসন ক্যাডারে আরও কয়েক শ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেন, পদোন্নতি হওয়া উচিত পদের ভিত্তিতে, যোগ্যতা ও মেধার মাপকাঠিতে।