সাংসদকে ক্রেস্ট দিলেন হত্যা মামলার আসামি

সাংসদ গোলাম মোস্তফা আহম্মেদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন নাশকতা মামলার আসামি জামাল হোসেন। পেছনে দাঁড়িয়ে আবুল কাশেম l ছবি: প্রথম আলো
সাংসদ গোলাম মোস্তফা আহম্মেদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন নাশকতা মামলার আসামি জামাল হোসেন। পেছনে দাঁড়িয়ে আবুল কাশেম l ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের নবনির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ গোলাম মোস্তফা আহম্মেদকে নৌকা প্রতীকসংবলিত ক্রেস্ট দিয়েছেন চার পুলিশ সদস্য হত্যা ও নাশকতা মামলার আসামি জামাল হোসেন। এ সময় আরেক আসামি আবুল কাশেম সাংসদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এ অনুষ্ঠান হয়।

গণসংবর্ধনার ব্যানারে লেখা ছিল: আয়োজনে জামাল হোসেন, পোলট্রি ব্যবসায়ী ও সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ ইউনিয়নের কদমতলা এলাকাবাসী।

জামাল হোসেনের বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্র গ্রামে। তিনি স্থানীয় জামায়াতের ‘অর্থ জোগানদাতা’ এবং সুন্দরগঞ্জের একাধিক নাশকতা ও পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ফরিদ উদ্দিনের ছেলে। আর আবুল কাশেমের বাড়ি উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামে। তিনি বামনডাঙ্গা শিশুনিকেতনের অধ্যক্ষ। তিনিও চার পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি।

বুধবার বিকেল পাঁচটায় রামভদ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। শেষ
হয় রাত নয়টার দিকে। শুরুতে সাংসদকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে সাংসদ মোস্তফার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন জামাল হোসেন। ক্রেস্টে লেখা: সৌজন্যে জামাল হোসেন, পোলট্রি ব্যবসায়ী। সাংসদ ও তাঁর লোকজন অনুষ্ঠান শেষে জামাল হোসেনের বাড়িতে নৈশভোজে অংশ নেন।

গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সর্বানন্দ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফছার আলী। বক্তব্য দেন সাংসদ গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সাংসদ বলেন, ‘আমি সব রাজনৈতিক ব্যক্তি, শিক্ষক, ছাত্রসহ সুন্দরগঞ্জের সব স্তরের মানুষকে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করতে চাই।’

জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির এ উপজেলায় সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালায়। বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে চার পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন ও বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। জামাল হোসেন ও আবুল কাশেম এসব নাশকতা ও পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা জামিনে রয়েছেন।

হত্যা মামলার আসামির কাছ থেকে ক্রেস্ট নেওয়া প্রসঙ্গে সাংসদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমাকে গণসংবর্ধনা দিয়েছে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। সেখানে হাজার হাজার দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে অনেক ব্যক্তি আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ও ক্রেস্ট দিয়েছেন। সবাইকে আমার পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। সেখানে কে নাশকতা মামলার আসামি আর কে কোন দলের লোক, তা কীভাবে বুঝব? অথচ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ আসামি জামাল হোসেনের বাড়িতে নৈশভোজে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ এড়িয়ে যান।