স্কুল কামাইয়ের এমন শাস্তি

বরগুনার আমতলীতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে এক ছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়ে ১১ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শিক্ষার্থীর বাবা।
নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ মান্না। সে উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম আমতলী গ্রামের মোশাররফ হোসেন হাওলাদারের ছেলে ও আমতলী আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেটির বাম পা, পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। এসব স্থান ফুলে আছে। মান্না এখন মানসিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত। তার সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।
বিদ্যালয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, মান্নাকে গত জানুয়ারিতে আমতলী আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গল ও বুধবার ফুফাতো বোনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ায় সে বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় মান্না বিদ্যালয় যায়। এ সময় বিদ্যালয়ের পরিচালক হানিফ মিয়া তাকে অফিসকক্ষে ডেকে দুদিন বিদ্যালয়ে না আসার কারণে জোড়া বেত দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। মান্না অনুনয়-বিনয় করে পরিচালকের পা জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তিনি (পরিচালক) নিবৃত্ত হননি। একপর্যায়ে সে (মান্না) ছুটে গিয়ে অফিস সহকারী সাইফুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে। এতে পরিচালক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে মান্নাকে টেনেহিঁচড়ে এনে পুনরায় পেটান এবং কক্ষের দেয়ালের সঙ্গে তার মাথা চেপে ধরেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মান্নার তিন সহপাঠী জানায়, পিটুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়লেও জোর করে মান্নাকে ক্লাসে এনে বসিয়ে রাখা হয়। সারাটা সময় সে ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। কিন্তু তার চিকিৎসারও কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। বিকেলে বিদ্যালয় ছুটির পরও মান্নাকে বাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি। মান্নাকে রাত আটটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে আটকে রাখা হয়। ওই সময় ছেলের খোঁজ নিতে বিদ্যালয়ে আসেন মান্নার বাবা মোশাররফ হোসেন হাওলাদার। এসে ছেলের এ অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। পরে তিনি মান্নাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন।
মোশাররফ হোসেন হাওলাদার বলেন, তাঁর উপস্থিতি টের পেয়ে হানিফ মিয়া দ্রুত সটকে পড়েন। হানিফ স্থানীয় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গোছখালী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকও।
মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার রাতেই এ ঘটনায় আমতলী থানায় গিয়ে হানিফ মিয়াকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদউল্লাহ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি আমতলী হাসপাতালে গিয়ে ওই ছাত্রকে দেখে এসেছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে হানিফ মিয়ার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।