দুই পক্ষের হাতাহাতি, কার্যক্রম শুরু হয়নি

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম দুই পক্ষের হাতাহাতির কারণে গতকাল শুক্রবার শুরু হয়নি। এদিকে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত মহম্মদপুরে এ যাচাই-বাছাই কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার আদেশ দিয়েছেন।
মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল সকালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানের কথা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাক্ষাৎকার দিতে সকালে অনেকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আসেন। এ সময় উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিবদমান দুটি পক্ষও ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী রেজা খোকন। অন্য পক্ষের নেতা ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হাই। সকাল ১০টার দিকে কমান্ডার আলী রেজা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে যেতে চাইলে বাধা দেন ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হাইয়ের সমর্থকেরা। এ নিয়ে উত্তেজনার একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আবদুল মান্নান দুই পক্ষকে শান্ত করেন। পরে পুলিশ সবাইকে সরিয়ে দেয়।
আবদুল মান্নান গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই পক্ষই মারমুখী ছিল। আমি গিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি। বিশ্রী অবস্থা। এটা দুঃখজনক।’
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে মহম্মদপুরে ৭০০ জন অনলাইনে আবেদন করেন। গত ২১ জানুয়ারি সাক্ষাৎকার শুরু হয়। তবে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে দ্বিতীয় দফায় গতকালও কার্যক্রম শুরু করা গেল না।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী রেজা খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে আমি কিছুদিন ঢাকায় ছিলাম। এ সময় ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হাই ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ছিলেন। আমি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছি। কিন্তু ডেপুটি কমান্ডার আমার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন না। ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার হিসেবে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না।’
অভিযোগের বিষয়ে ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হাই বলেন, ‘জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তাই দায়িত্ব হস্তান্তরের কোনো এখতিয়ার আমার নেই।’
কমান্ডার আলী রেজা এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার মাগুরার আদালতে একটি মামলা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মহম্মদপুরে চলমান মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের কাজের ওপর কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না, জানতে চেয়েছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক মণ্ডল, সদস্যসচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ নোটিশের জবাব দিতে বলেছেন।
এদিকে মহম্মদপুরে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে সম্প্রতি উচ্চ আদালতে রিট করেন আবু আইয়ুব বিশ্বাস নামের এক মুক্তিযোদ্ধা। রিটে টাকার বিনিময়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে উপজেলায় এ যাচাই-বাছাই কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। এ ছাড়া বেঞ্চ ‘কেন যাচাই-বাছাই অবৈধ ঘোষণা করা হবে না’ তার কারণ দর্শাতে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডেপুটি সচিব, জামুকার পরিচালক, মহম্মদপুর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও সদস্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মহম্মদপুরের ইউএনও এবং যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যসচিব চৌধুরী রওশন ইসলাম গতকাল বিকেলে বলেন, ‘মহম্মদপুর আদালতের কারণ দর্শানোর চিঠি পেয়েছি। তবে আদালত স্থগিতাদেশ দেননি। তাই কার্যক্রম চলবে। আর উচ্চ আদালতে থেকে স্থগিতাদেশের কোনো কাগজপত্র আমার কাছে পৌঁছেনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের দুই পক্ষের বিরোধের বিষয়টি আমার জানা নেই। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালায় অংশ নিচ্ছি। তাই আজ (শুক্রবার) যাচাই-বাছাইয়ের কাজ স্থগিত করেছি। আগামীকাল (শনিবার) থেকে কার্যক্রম শুরু হবে।’