বাদামচাষিরও মাথায় হাত

উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে কিশোরগঞ্জে ধানচাষিদের পাশাপাশি বাদামচাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোনো চাষির সব খেত পানিতে তলিয়ে গেছে, একটি বাদামও ঘরে তুলতে পারেননি। অনেকে পানির নিচ থেকে অপুষ্ট বাদাম তুলে আনলেও সেগুলো পচে গেছে।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিকলী উপজেলার বাদামচাষিরা। এ উপজেলায় এবার ১৮০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়। এর প্রায় অর্ধেক জমিই পানির নিচে তলিয়ে বাদাম নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভৈরব, কটিয়াদী, তাড়াইল ও মিঠামইনসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বাদাম চাষ হয়। সেগুলোও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
নিকলী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল শুক্রবার বলেন, এ উপজেলার গুরুই, ভাটি বরাটিয়া, পরান্নেরচর, রবিয়ারচর, বান্ডারচর, শোলাবাড়িয়া, ছাতিরচর, দামপাড়া ও কারপাশা এলাকা বাদাম চাষের উপযোগী জায়গা। কিন্তু অকালবন্যায় মোট আবাদের অর্ধেক পানিতে তলিয়ে গেছে। যদি আর ১৫ দিন পরে পানি আসত তাহলে কিছু বাদাম কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারতেন।
কয়েক দিন ধরে মিঠামইন, তাড়াইল ও নিকলীসহ বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, ঢলের পানিতে বাদামখেত তলিয়ে গেছে। কিষান-কিষানিরা ডুব দিয়ে বাদাম নৌকায় তুলছেন। কেউ নদীর পাড়ে বসে গাছ থেকে ভেজা বাদাম আলাদা করছেন। অনেকেই ভেজা বাদাম রোদে শুকাচ্ছেন।
কৃষকেরা বলেন, ধান পানিতে ভিজলেও রোদে শুকানোর পর তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু বাদামে একবার পানি লাগলে তা রোদে শুকিয়েও টেকানো দায়। সেগুলো কালচে হয়ে পচে নষ্ট হয়। বেশির ভাগ খেতের বাদাম অপুষ্ট রয়েছে। এখনো তা তোলার উপযোগী হয়নি।
নিকলী সদরের কৈয়বতহাটি এলাকার বাদামচাষি মুর্শিদ আলী বলেন, তিনি এবার দুই একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। কিন্তু তাড়াতাড়ি পানি চলে আসায় প্রায় আধা একর জমির অপুষ্ট বাদাম তুলেছিলেন। সেগুলো পচে গেছে। বাকি জমির একটি বাদামও তুলতে পারেননি। পানি না এলে তিনি প্রায় ৩৫-৪০ মণ বাদাম পেতেন, যা ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। এখন বিক্রি তো দূরের কথা, তিনি তাঁর খরচার ২৫ হাজার টাকাই ওঠাতে পারেননি।
একই উপজেলার টিক্কল হাটি এলাকার বিল্লাল মিয়া দেড় একর, কামালপুরের কৃষক রাজন মিয়া দুই একর জমিতে বাদাম করেছিলেন। তাঁদের অর্ধেক খেত পানিতে তলিয়ে আর অর্ধেক বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। একই এলাকার মনু মিয়া ও হারুন মিয়া পাঁচ একর এবং রোদার পোড্ডা গ্রামের দেওয়ান শাহ দেড় একর জমিতে বাদামের চাষ করেন। এসব জমি এক রাতেই তলিয়ে যায়।
বাদামচাষি দেওয়ান শাহ বলেন, সবাই ধানচাষিদের ক্ষতি নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমরা যারা বাদাম চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাদের কথা কেউ বলেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় মোট ৬০ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৮৫৮ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬১ জন। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাদামচাষিদের হিসাবও রয়েছে।