প্রচারণার অভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন দুস্থ ব্যক্তিরা

যথাযথ প্রচারণার অভাবে সরকারিভাবে মামলা পরিচালনায় আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক মানুষ। দালালদের খপ্পরে পড়ে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারিভাবে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ পালন করা হলেও বাস্তবে তৃণমূল পর্যায়ে অসহায় ও গরিব মানুষের কাছে এ তথ্য পৌঁছাচ্ছে না।
জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির সদস্যসচিব ও সহকারী জজ সহদেব চন্দ্র রায় বলেন, ‘এলাকার অসহায় ব্যক্তিরা বিনা খরচে আইনি সহায়তা নিতে প্রত্যাশা অনুযায়ী আসছেন না। ইউনিয়ন ও উপজেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির কাজ খুব একটা নজরে পড়ে না। তৃণমূল পর্যায়ে কাজ না থাকলে যেকোনো উদ্যোগের গতি থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবে গরিব-অসহায় ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা দিতে আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে।’
আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সূত্রে জানা যায়, সরকার আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন ও নানা আর্থসামাজিক কারণে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী ব্যক্তিদের সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০’ পাস করে। এর আওতায় সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার একই বছর ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান’ সংস্থা নামের একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে।
আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৭ বছরে এ কার্যক্রমের আওতায় ১ হাজার ৮৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দেওয়ানি ১৯২টি, ফৌজদারি ৫৯২টি ও পারিবারিক ৩০২টি। এগুলোর মধ্যে ৫৯৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে বিচারাধীন মামলা আছে ৪৯৩টি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিচারপ্রার্থী বলেন, তাঁর জামাতা যৌতুকের জন্য মেয়েকে মারধর করেন। এলাকার এক লোক তাঁকে এক আইনজীবীর কাছে নিয়ে যান। বিনিময়ে তিনি তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেন। মামলাটি চালাতে গিয়ে তিনি এখন বিপদে পড়েছেন। অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন ব্যক্তিরা বিনা খরচে আইনি সহায়তা পেতে পারেন, এমন ধারণা তাঁর ছিল না।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী জাহিদ ইকবাল বলেন, অসহায় মানুষের জন্য বিনা মূল্যে আইনি সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে—এ তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সবার। প্রতিবছর শুধু জেলা শহরে ঢাকঢোল পিটিয়ে আইনি সহায়তা দিবস পালন করা হয়। কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে তা পৌঁছায় না।
সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হাসান মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া হলে তৃণমূলের মানুষ আইনি সহায়তা সম্পর্কে সচেতন হতে পারত। কিন্তু আমরা শুধু জেলা সদরেই আয়োজন সীমাবদ্ধ রাখছি।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবদুল হালিম বলেন, প্রচারণার কাজটা আসলে সেভাবে হয় না। ইউপি সদস্যদের সম্পৃক্ত করে প্রচারণা চালাতে হবে।
গতকাল শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান দিবস উপলক্ষে জেলা শহরে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়। এতে জেলা আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটির সদস্যসচিব ও সহকারী জজ সহদেব চন্দ্র রায় স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে চারজন বিচারপ্রার্থী তাঁদের অনুভূতির কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. হায়দার আলী, জ্যেষ্ঠ জেলা জজ মো. আয়ুব আলী, পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল হালিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আইনি সহায়তায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য অনুষ্ঠানে তিনজন আইনজীবীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন আনিসুর রহমান, মো. নুরুল ইসলাম ও মোছা. মাসুদা পারভীন।