খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণ

সরকারি খাল দখল করে ভোলায় এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) পাকা বাড়ি তুলছেন। দখলের পরিমাণ প্রায় ৬ শতাংশ। খালটি ভোলা খালের শাখা সুভ্রকান্দি খালের অংশ। ওই খাল দিয়ে ভোলা পৌরসভা ও বাপ্তা ইউনিয়নের জোয়ার ও বৃষ্টির পানি ওঠানামা করে। খালের মধ্যে বাড়ি তোলায় এলাকাবাসী বর্ষায় প্লাবিত হচ্ছে এবং সেচের পানি পাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল আমিন বলেন, তিনি প্রাথমিকভাবে লোক পাঠিয়ে দেখেছেন, আবদুল মালেক নামের জনৈক ব্যক্তি সরকারি খাল দখল করে পাকা ভবন তুলছেন। তাঁরা খালের ম্যাপ, কাগজপত্র দেখে পাকাপাকিভাবে ওই বাড়ি উচ্ছেদের চেষ্টা করবেন।
১৭ এপ্রিল বেলা ১১টায় সরেজমিন দেখা যায়, ভোলা খালের একটি শাখা ইলিশা বাসস্ট্যান্ডের কাছে পোদ্দার বাড়ির পেছন দিয়ে উঠে ভোলা শহরের আবহাওয়া অফিস রোডের পাশে বাপ্তা ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে সুভ্রকান্দি বিল হয়ে ধনিয়ার দিকে চলে গেছে। আবদুল মালেকের বাড়িটির নাম ‘খান মঞ্জিল’। এ বাড়ির পেছনে খালটি অবস্থিত। সামনে আবহাওয়া অফিস সড়ক। বর্তমানে খালের প্রস্থ কোথাও ২০ ফুট, কোথাও ৩০-৩৫ ফুট। পুলিশ সদস্য আবদুল মালেক যেখানে বাড়ি নির্মাণ করেছেন, সেখানে খালের প্রস্থ বাকি আছে ৫-৬ ফুট। বাকিটা দখল হয়ে গেছে। কৃষি অফিসের ভাষ্যমতে, খালটির নাম সুভ্রকান্দি খাল, আবার কেউ বলেন বাপ্তা খাল।
বাপ্তা ইউনিয়নে কর্মরত ভোলা সদর উপজেলার ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বাপ্তা ও ভোলা পৌরসভার বর্ষার পানি ও জোয়ারের পানি এ খাল দিয়ে ওঠানামা করে। জোয়ারের পানি দিয়ে বাপ্তা এলাকায় সহস্রাধিক হেক্টরে বোরো আবাদ হতো। খাল খনন না করায় আর দখলে-দূষণে জোয়ারের পানি না ওঠায় সুভ্রকান্দি ও চারআনি বিলে এখন বোরো আবাদ হয় না। বর্ষায় জমা পানি বের না হতে পারলে ওই সব বিলে আমন-আউশ আবাদ ব্যাহতসহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।
এলাকার কমপক্ষে ৫০ জন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী বলেন, ২০১১ সাল থেকে পুলিশ সদস্য আবদুল মালেক খাল দখল শুরু করেছেন। তখন তিনি অবসর নেননি। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি। পুলিশ সদস্য ধীরে ধীরে খাল দখল করেই যাচ্ছেন।
বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মঞ্জুর মাতব্বর বলেন, শুধু পুলিশের এক সদস্য খালটি দখল করে খালের মুখ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে প্রতিবছর ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, পানির স্রোতের গতিপথ ঘুরে মানুষের নিজস্ব সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে। ভূমি অফিসকে বারবার বলার পরেও সরকারি খাল দখলদারকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে না।
ভোলা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জুর আহমেদ বলেন, পুলিশ সদস্য আবদুল মালেককে একাধিকবার সরকারি খাল দখল করে পাকা ভবন নির্মাণে বাধা দিলেও তিনি শোনেননি।
কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আবদুল মালেক তাঁর স্ত্রী মোসাম্মৎ মোসলেমার নামে (৫১৫৯ নম্বর দাগে) ৪ শতাংশ জমি কিনেছেন। সামনে দিয়ে রাস্তা যাওয়ার কারণে সোয়া ৩ শতাংশ টিকেছে।
ওই জমির প্রকৃত মালিক সন্তোষ মজুমদার বলেন, তিনি মিন্টু ব্যাপারীর কাছে মোট ১১ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন। যার মধ্যে ৫১৫৯ নম্বর দাগে ছিল ৪ শতাংশ। মিন্টু ব্যাপারী এই ৮ শতাংশ জমি পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর কাছে বিক্রি করেছেন। তবে মিন্টু ব্যাপারী বলেন, তিনি ৫ শতাংশ বিক্রি করেছেন।
এলাকাবাসী মো. কবিরসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ৪ শতাংশের মালিক হয়ে আবদুল মালেক প্রায় ১০ শতাংশ জমি ভোগদখল করছেন।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুল মালেকের বক্তব্য জানতে গেলে তাঁর ছেলে আবদুস সালাম এ প্রতিনিধির ওপর চড়াও হয়ে বলেন, ‘ল্যাখলে কিছু অয়না। কত্তো অফিসার আইলো গেল।’ পরে আবদুল মালেক ঘর থেকে বের হয়ে এসে বলেন, ‘ও ছোট মানুষ, রক্ত গরম’। তিনি আরও বলেন, তিনি খাল দখল করেননি। ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি তাঁর দখলে আছে। মিন্টু ব্যাপারীর কাছে জমি কিনেছেন ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। বাকিটা সেটেলমেন্ট অফিস থেকে পরচা কাটিয়েছেন। অন্যরা খাল দখল করছে বলেই খাল ছোট হচ্ছে।