পুলিশ বলছে আত্মহত্যা, বাবা মানছেন না

সাব্বির আহাম্মেদ
সাব্বির আহাম্মেদ

রাজশাহীতে পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) সাব্বির আহাম্মেদের মরদেহ ঝুলে ছিল অফিসার্স মেসের জানালার গ্রিলের সঙ্গে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জানালা দিয়ে তাঁর মরদেহটি ঝুলে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে একে আত্মহত্যার ঘটনা বলছে। তবে সাব্বির আহাম্মেদের বাবা রাজশাহী মহানগর পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কমিশনার মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, তাঁর ছেলের আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই।
ছেলের মৃত্যুর খবর যখন পান ওবায়দুল্লাহ, তখন তিনি ঢাকায়। তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর উপস্থিতিতে যেন লাশ নামানো হয়। এরপর পুলিশ ভেতর থেকে বন্ধ দরজার ওপর আরও একটি তালা ঝুলিয়ে দেয়। প্রায় সাত ঘণ্টা পর বাবার উপস্থিতিতে গতকাল বিকেলে ছেলের লাশ নামানো হয়।
সাব্বির আহাম্মেদ ৩১তম বিসিএস দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশে যোগদান করেছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তাঁর স্ত্রী সুলতানা শারমিন রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। তাঁদের চার বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। রাজশাহী শহরের উপশহর এলাকায় তাঁদের চারতলা বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মা-বাবার সঙ্গে সাব্বির থাকতেন।
নগরের কাজীহাটা এলাকায় রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরের বিপরীত পাশে সাব্বিরের শ্বশুরবাড়ি। তাঁর শ্বশুর আবদুস সালাম পেশায় চিকিৎসক। সাব্বিরের স্ত্রী দুই বাসাতেই থাকতেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাতে তদারকি ডিউটি শেষে সাব্বির রাজশাহী মহানগর পুলিশের অফিসার্স মেসে এসে ঘুমিয়েছিলেন। এটি নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় অবস্থিত।
মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, ভেতর থেকে দরজা বন্ধ দেখে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পেছনের থাই গ্লাস লাগানো জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে তিনি দেখেন, জানালার গ্রিলের সঙ্গে সাব্বিরের মরদেহ ঝুলে আছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা হবে।
কয়েক ঘণ্টা পর লাশ উদ্ধারের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইফতে খায়ের আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিকটাত্মীয়ের উপস্থিতিতে সাধারণত আমরা লাশ নামিয়ে থাকি। যেহেতু বাবা-মা, ভাই সবাই ঢাকায় ছিলেন, সে জন্য আমরা অপেক্ষা করেছিলাম।’ তখন সাব্বিরের স্ত্রী কোথায় ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তিনি সন্তানসম্ভবা। এই অবস্থায় তাঁর আসা চলে না।
লাশের সুরতহাল করার সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ আসিফ রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাব্বিরের মা-বাবার উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে কক্ষের ভেতরে ঢোকা হয়। গলায় রশি দেওয়া অবস্থায় তাঁর আধশোয়া লাশ সোফার ওপর পেয়েছেন।
এর আগে জানালা দিয়ে লাশ দেখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভেতর থেকে দরজা বন্ধ ছিল। কক্ষে প্রবেশের যদি অন্য কোনো রাস্তা না থাকে এবং শরীরে পুলিশ যদি আঘাতের কোনো চিহ্ন না পায়, তাহলে বলা যাবে এটি আত্মহত্যা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর তা নিশ্চিত করে বলা যাবে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সাব্বিরের বাবা অফিসার্স মেস থেকে বের হন। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর ছেলের আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তাঁরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন।