ক্ষমতায় না থাকলে টাকা পয়সা নিয়ে পালাতে হবে

মহিউদ্দিন চৌধুরী, আ জ ম নাছির
মহিউদ্দিন চৌধুরী, আ জ ম নাছির

ক্ষমতা বেশি দিন থাকে না। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকাপয়সা নিয়ে পালাতে হবে। সেটা কি ভাবেন না? এখন যে টাকাপয়সা রোজগার করছেন, এই টাকা নিয়ে তখন পালিয়ে বেড়াতে হবে। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে এসব কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

অবশ্য দলের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সভায় চট্টগ্রামের সাংসদ (পতেঙ্গা-হালিশহর) এম এ লতিফের নাম উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের নেতারা চিৎকার করে তাঁর (লতিফ) বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন। ওবায়দুল কাদেরসহ দুই নেতার বক্তৃতার আগে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি সামাল দেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। সভা শেষ হওয়ার পর দ্রুত চলে যান সাংসদ লতিফ।

নগরের পাঁচলাইশ এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সকাল ১০টায় সভা শুরু হয়। এতে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতাকে ইঙ্গিত করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই যে একটা বিষয় ঘটে গেল, কাদা-ছোড়াছুড়ি ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গেল। এর সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন মহিউদ্দিন (চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী) ভাই। তিনি মুরব্বির ভূমিকায় যদি থাকেন, তাহলে ঢাকার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। অসুস্থ প্রতিযোগিতা রাজনীতির জন্য শুভ নয়।’

গৃহকর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত, সবচেয়ে বড় মাছের আড়ত স্থানান্তর, আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণের প্রতিবাদে ১০ এপ্রিল লালদীঘির মাঠে মহিউদ্দিন চৌধুরী সমাবেশ করেন। সমাবেশে তিনি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে ‘খুনি’ বলে মন্তব্য করেন। মহিউদ্দিনের এই বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে মন্তব্য করেন মেয়র নাছির। তিনি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগেরও সাধারণ সম্পাদক।

লালদীঘির ওই ঘটনার এক সপ্তাহ পর ১৭ এপ্রিল শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত দলীয় সভায় দুই নেতা একে অন্যের হাত ধরে ঐক্যের বার্তা দেন। কিন্তু এর পরদিন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা মহিউদ্দিনের অনুসারী। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর তিনি চাপে পড়েন বলে দলীয় সূত্র জানায়।

দুই নেতার বিরোধ মিটে গেছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা অসাধ্যকে সাধন করেছেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা ভুটানে যাচ্ছিলেন। ঢাকা বিমানবন্দরে পত্রিকার পাতায় আপনাদের দুজনের পাশাপাশি হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখে নেত্রীর চোখেমুখে যে হাসি ছিল, সেটা অকুণ্ঠ মনোযোগে আমি লক্ষ করেছি।’

মহিউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ নগর আওয়ামী লীগের দুজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মেয়র নাছিরের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে মহিউদ্দিনই প্রথম উদ্যোগ নেন। এরপর গত শুক্রবার রাতে মহিউদ্দিনের বাসায় যান মেয়র নাছির। এ সময় দলের দুজন কেন্দ্রীয় নেতাও উপস্থিত ছিলেন।

ওবায়দুল কাদেরের প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তৃতায় অন্তত সাত মিনিটই ছিল দুই নেতার বিরোধের বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। সামনে আর বিভেদের দিকে যেতে চাই না। আমি তো নাছিরকে বলি, তিনি (নাছির) মহিউদ্দিন ভাইয়ের ছেলের মতো। নাছির ভুল করলে আপনি (মহিউদ্দিন) ঘরে নিয়ে শাসন করবেন। কিন্তু আমরা এভাবে ঘরের কথা পরকে বলতে পারি না। কেউ ধৈর্য্য ধরতে পারেনি। এই ধৈর্য্যটা ধরা উচিত ছিল।’

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকার কোনো চুক্তি করেনি বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ৭০ হাজার কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৪ লাখ ছাত্র। এদের কোনো ঠিকানা নেই, ভবিষ্যৎ নেই। এরা ভবিষ্যতে চাকরি পাবে এর কোনো গ্যারান্টি নেই। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দলের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে। ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে কেউ আমাদের ঠেকাতে পারবে না।’

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।