কুমিল্লায় পাসের হার সর্বনিম্ন

ফল ঘোষণার পর নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোকসানা ফেরদৌস মজুমদারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উল্লাস। ছবি: এমদাদুল হক
ফল ঘোষণার পর নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোকসানা ফেরদৌস মজুমদারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উল্লাস। ছবি: এমদাদুল হক

এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় সারা দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার সবার নিচে। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার এক লাফেই কমেছে ২৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। একই সঙ্গে জিপিএ-৫ কমেছে, কমেছে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।

বিজ্ঞানে ছেলেরা এবং ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে মেয়েরা পাসের হারে এগিয়ে। কেউ পাস করেনি—এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা দুই।

গণিত, ইংরেজিসহ অন্তত আটটি বিষয়ে খারাপ করায় ওই ফলবিপর্যয় হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এসএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলের বিবরণীতে ওই তথ্য পাওয়া গেছে।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত ছয় জেলার ১ হাজার ৬৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৭৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। কৃতকার্য হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ১১ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪৯ হাজার ৪৫৬ জন, মেয়ে ৫৮ হাজার ৫৫৫ জন। পাসের হার ৫৯ দশমিক শূন্য ৩। ছেলেদের পাসের হার ৫৯ দশমিক ৫১, মেয়েদের পাসের হার ৫৮ দশমিক ৬৩। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে ছেলে ২ হাজার ২৯৭ জন, মেয়ে ২ হাজার ১৫৩ জন।

বিজ্ঞানে এগিয়ে ছেলেরা
এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে ৪৭ হাজার ৯১ জন পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয় ৩৯ হাজার ৬৩১ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ১৬। এতে ছেলেদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৪, মেয়েদের পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৫। বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৩৩৮ জন। এর মধ্যে ছেলে ২ হাজার ২৮১ জন, মেয়ে ২ হাজার ৫৭ জন।

মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০ জন
মানবিক বিভাগে ৫৪ হাজার ৯৫৭ জন পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয় ২২ হাজার ৬০৯ জন। পাসের হার ৪১ দশমিক ১৪। ছেলেদের পাসের হার ৩৬ দশমিক ৭০, মেয়েদের পাসের হার ৪২ দশমিক ৪৫। মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০ জন। এর মধ্যে ২ জন ছেলে, ২৮ জন মেয়ে।

ব্যবসায় শিক্ষায় মেয়েরা এগিয়ে
ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৮০ হাজার ৯৩১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয় ৪৫ হাজার ৭৭১ জন। পাসের হার ৫৬ দশমিক ৫৬। ছেলেদের পাসের হার ৫২ দশমিক ২১, মেয়েদের পাসের হার ৬২ দশমিক ১৮। ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২ জন। এর মধ্যে ১৪ জন ছেলে ৬৮ জন মেয়ে।

কুমিল্লা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, গত পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এবারই পাসের হার ও জিপিএ-৫ একেবারেই কমে গেছে। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৪। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬ হাজার ৯৫৪ জন। এবার জিপিএ-৫ কমেছে ২ হাজার ৫০৪টি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও ক্রমাগতভাবে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে।

এ বছর আটটি সাধারণ বোর্ডে এসএসসিতে গড় পাসের হার ৮১ দশমিক ২১। রাজশাহী বোর্ডে সর্বোচ্চ পাসের হার ৯০ দশমিক ৭০। সর্বনিম্ন পাসের হার কুমিল্লা বোর্ডে ৫৯ দশমিক শূন্য ৩।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফলবিপর্যয় প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাবেক অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘প্রশাসন এবং বোর্ড এবার নকল প্রতিরোধে কঠোর ছিল। কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফলই দেশের প্রকৃত ফলের চিত্র। এ মডেল সব বোর্ড অনুকরণ করলে অন্যান্য বোর্ডের ফলও একই হতো।’

দুটি বিদ্যালয়ে পাসের হার শূন্য
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের দুটি বিদ্যালয় থেকে এবার কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। ওই বিদ্যালয়গুলোতে পাসের হার শূন্য ভাগ। বিদ্যালয় দুটি হলো কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাজী জাফর আহমেদ গার্লস হাইস্কুল ও একই উপজেলার পায়েরখোলা উচ্চবিদ্যালয়। এর মধ্যে যথাক্রমে কাজী জাফর আহমেদ গার্লস হাইস্কুলে ২৯ জন ও পায়েরখোলায় ৩২ জন করে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।

কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা: এ বছর কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। গত বছর ১১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ১০৫টি। এর আগে ২০১৬ সালে ১১৯টি, ২০১৫ সালে ১৭৬টি, ২০১৪ সালে ১৬৭টি, ২০১৩ সালে ২৭৫টি, ২০১২ সালে ১৩০টি, ২০১১ সালে ১১২টি, ২০১০ সালে ৮৫টি, ২০০৯ সালে ৪৫টি, ২০০৮ সালে ৭২টি, ২০০৭ সালে ছয়টি, ২০০৬ সালে ৩২টি, ২০০৫ সালে ১৭টি এবং ২০০৪ সালে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছিল।

সার্বিক বিষয়ে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন, ‘ইংরেজি, গণিতসহ অন্তত আটটি বিষয়ে খারাপ ফল করায় সার্বিক ফলবিপর্যয় হয়েছে। এ ছাড়া এবার খাতা মূল্যায়ন ও পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়াকড়ি আরোপ এবং কঠোর নজরদারিও ছিল।’

বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুল খালেক বলেন, ‘ইংরেজি ও গণিতে যেসব বিদ্যালয় খারাপ ফল করেছে, তাদের চিঠি দেওয়া হবে। পাসের হার কমার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে ভালো করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’