ফলাফলে ছেলেকে টপকে গেলেন মা

ফলাফল ঘোষণার পর সবার সামনে মা-ছেলে পরস্পরকে মিষ্টি খাইয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। ছবি: প্রথম আলো
ফলাফল ঘোষণার পর সবার সামনে মা-ছেলে পরস্পরকে মিষ্টি খাইয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। ছবি: প্রথম আলো

মা মলি রাণী (৩৭) ও ছেলে মৃন্ময় কুমার (১৬) একসঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল, ছেলেকে টপকে গেছেন মা। মা পেয়েছেন জিপিএ–৪.৫৩, আর ছেলে পেয়েছে জিপিএ–৪.৪৩। মা-ছেলে পরস্পরকে মিষ্টি খাইয়ে ভালো ফলের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুর গ্রামের মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমারের স্ত্রী মলি ও ছেলে মৃন্ময় একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে ‘একসঙ্গে মা-ছেলের এসএসসি পরীক্ষা’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়। আজ বৃহস্পতিবার এসএসসি ফলাফল প্রকাশের পর তাঁদের বাড়িতে যান এ প্রতিবেদক। ছেলে ঘর থেকে মিষ্টি এনে সবার সামনে মায়ের মুখে তুলে দেন। খুশিতে আত্মহারা মা একসময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন।

মা বললেন, এই বয়সে ছেলের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভেবে খুব লজ্জা লাগছিল। তবে লেখাপড়া শেখার প্রবল আগ্রহ তাঁকে পরীক্ষায় অংশ নিতে উৎসাহ জোগায়। জানতে পেরে ছেলে ও স্বামী তাঁকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বলে। এরপর তিনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তাঁরা মা-ছেলে পাল্লা দিয়ে পড়াশোনা করতেন। পাস করে খুশি হলেও জিপিএ-৫ পেলে আরও খুশি হতেন বলে জানালেন। সামনে আরও পড়াশোনা করে অন্তত স্নাতক পাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন।

ছেলে মৃন্ময় বলল, ফল মায়ের চেয়ে একটু খারাপ হয়েছে। তবে দুঃখ নেই। মায়ের ভালো ফলে সে খুশি। সামনের পরীক্ষায় মাকে টপকে যাওয়ার আশা প্রকাশ করল সে।

দেবব্রত কুমার বলেন, স্ত্রী ও ছেলে একসঙ্গে পাস করার খবরে তিনি আনন্দিত। খুশি ভাগাভাগি করতে তিনি তাঁর দোকানে আসা সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার খবর প্রথম আলোতে প্রকাশের পর অনেকেই তাঁর দোকানে এসে পরিচিত হন এবং মিষ্টি কেনেন। তখন থেকে দোকানের বেচাকেনাও বেড়ে গেছে। স্ত্রী-সন্তান যত দিন চাইবে, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে বল তিনি আশ্বাস দেন।

মা নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুরের অসিত কণ্ডুর মেয়ে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায়। পরে আর পড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। কোলে আসে দুটি সন্তান। ওরা পড়ালেখা শুরু করে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওদের পড়ান তিনি। বড় ছেলে মৃন্ময় যখন বাগাতিপাড়া মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে কারিগরি শাখায় বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স ট্রেডে নবম শ্রেণিতে ওঠে, মলির তখন নতুন করে পড়ার ইচ্ছা জাগে। তিনি বাগাতিপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে কারিগরি শাখায় ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং ট্রেডে ভর্তি হন। এবার ভালো ফল করে চমকে দিলেন সবাইকে।