'প্রহসনের' নির্বাচন বাতিল করে সমঝোতায় আসুন

খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া

অবিলম্বে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন বাতিল, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এই আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, ৫ জানুয়ারি ভোটারবর্জিত একতরফা কারসাজিকে জনগণ ঘৃণাভরে বর্জন করেছেন। তিনি নির্বাচনকে ‘কলঙ্কময় প্রহসন’ বলে আখ্যায়িত করে এই নির্বাচন বর্জন করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘সরকার আমাকে কার্যত গৃহবন্দী ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে, বিরোধী দল ও জনগণের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে সমস্যা ও সংকটের সুরাহা করতে চায়। কিন্তু এতে কোনো সুরাহা হবে না। সন্ত্রাসের পথে অবৈধ ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার অপচেষ্টায় শেষরক্ষা হবে না, বরং তাতে সংকট আরও জটিল ও গভীর এবং সমাধানের অযোগ্য হয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এই ‘অবৈধ সরকার’ দীর্ঘায়িত হবে না। তিনি কেন্দ্র থেকে যখন যে কর্মসূচি ঘোষণা হবে, তা পালন এবং স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ও সমন্বয় করে আন্দোলন চালানোর জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকারের অপচেষ্টাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা অকাতরে প্রাণ দিচ্ছেন। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের ক্ষমতার উৎকট বাসনা আর সীমাহীন উৎপীড়ন বেশি দিন চলতে পারে না।
বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার আর কোনো নৈতিক ও সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। জনগণের অনুমোদন ছাড়া দেশ পরিচালনার এখতিয়ার কারও থাকে না। তিনি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেআইনি কার্যকলাপ ও হত্যা-নির্যাতন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করুন। জনগণের সঙ্গে থাকুন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীসমূহসহ সকল নাগরিকের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’
খালেদা জিয়া দাবি করেন, আগেরবারের আওয়ামী শাসনামলে সৃষ্ট জঙ্গিবাদ বিএনপি ধর্মপ্রাণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে কঠোর হাতে দমন করেছিল। আজ আবারও স্বৈরশাসনের কারণে তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অবকাশ সৃষ্টি হয়েছে। এই স্বৈরব্যবস্থা কেবল বাংলাদেশে নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার স্বস্তি ও স্থিতিকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে বিশ্ববিবেককে সোচ্চার ও সক্রিয় হতে হবে।
বিবিসিকে খালেদা জিয়া: জামায়াতকে ছেড়ে এসে আলোচনায় বসার শেখ হাসিনার আহ্বান প্রসঙ্গে বিবিসিকে দেওয়া গতকাল এক সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা কার সঙ্গে কী করব, তিনি তা নির্ধারণ করে দেওয়া কেউ নন। শেখ হাসিনা জামায়াতের সঙ্গে ছিলেন। জামায়াতকে নিয়েই তিনি ক্ষমতায় গেছেন। এখন তাঁর সিদ্ধান্তে, বিএনপি চলবে না। বিএনপি স্বাধীন একটি দল। বিএনপি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।’
তারেকের ঘোষণা: প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি জানান, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর ভাষায় নির্বাচন-পরবর্তী ‘অবৈধ সরকারের’ সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্বাচন-উত্তর পরিস্থিতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়ার আগেই তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন।
শারীরিকভাবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে বিএনপির নেতৃত্বের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী তারেক রহমান আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তারেক রহমান লিখিত বক্তব্যে ১৮-দলীয় জোটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁর ভাষায় প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত ও বর্জন করায় দেশবাসী ও জোটের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের ভয়ানক এক দুর্যোগকালীন সময়ে বর্তমানে যেন ন্যায়ের সাথে অন্যায়ের, সত্যের সাথে মিথ্যার এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সাথে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ক্ষমতার মোহের লড়াই চলছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের সবার মূল লক্ষ্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে গণতন্ত্রকামী মানুষের চেতনার প্রতিফলন ঘটানো। সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত সর্বাত্মক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ তারেক রহমান দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজ নিজ এলাকায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যেকোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে।