সবার যত্নে ডালপালা মেলছে সেই গাছগুলো

তারাগঞ্জে রাস্তায় লাগানো গাছগুলো রক্ষায় ঘিরে দেওয়া হয়েছে জাল। পরিচর্যায় ব্যস্ত স্থানীয় মানুষ। ছবিটি গত রোববার ইকরচালী বাজার এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো
তারাগঞ্জে রাস্তায় লাগানো গাছগুলো রক্ষায় ঘিরে দেওয়া হয়েছে জাল। পরিচর্যায় ব্যস্ত স্থানীয় মানুষ। ছবিটি গত রোববার ইকরচালী বাজার এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জে ১৫৩টি রাস্তায় লাগানো গাছগুলো এখন নিজ উদ্যোগেই পরিচর্যা করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। কেউ নিজ উদ্যোগে নিজ বাড়ির সামনের গাছটি রক্ষায় দিচ্ছেন খাঁচা, কেউ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনের গাছগুলো ঘিরে দিচ্ছেন জাল দিয়ে। এভাবে রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের ১২ কিলোমিটার অংশে দুপাশের গাছগুলো খাঁচা বা জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, কচি ডালপালায় পুষ্ট হয়ে উঠছে অধিকাংশ গাছ। এর মধে৵ যে গাছগুলো মারা গেছে, সেই জায়গায় লাগানো হচ্ছে নতুন চারা। পাঁচ ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরাও গাছগুলোর তদারক করছেন।

মহাসড়কের শলেয়াশাহ্ সেতু থেকে চিকলী সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো হয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, অর্জুন, আকাশমণি, আমলকীসহ নানা জাতের ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ। তারাগঞ্জের ইউএনও জিলুফা সুলতানার নেতৃত্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় সহযোগিতায় গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর উপজেলার ১৫৩টি রাস্তায় আড়াই লাখ গাছ লাগানো হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এক ঘণ্টার মধে৵ এসব গাছ রোপণ করে নজির সৃষ্টি করেন। ‘সবুজ তারাগঞ্জ গড়ি’ স্লোগানে ওই কর্মযজ্ঞে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ আহসানুল হক চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানসহ পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। এ ধরনের একটি উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ইউএনও জিলুফা সুলতানাকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরাও পাড়ি’র সদস্য শিকর ইসলাম বলেন, দিনে দিনে সবুজ হয়ে উঠছে তারাগঞ্জ। গাছগুলো যাতে গরু-ছাগল না খায়, সে জন্য সংগঠনটির সদস্যরা এলাকা ঘুরে লোকজনকে সচেতন করছেন।

ভাই ভাই অটো রাইস মিলের মালিক ইকরামুল ইসলাম বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের সামনে মহাসড়কের ৪০০ মিটার এলাকায় গাছগুলো রক্ষায় বাঁশের খুঁটির সঙ্গে জাল দিয়ে ঘিরে দিয়েছি। দু-এক দিন পর পর গাছগুলোতে পানিও দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, নিজ খরচেই গাছগুলোর যত্ন নিচ্ছেন তিনি।

কচি পাতা ছেড়েছে সয়ার ইউনিয়নের ফকিরপাড়া-শেখপাড়া রাস্তায় লাগানো চারাগাছগুলো। শেখপাড়া গ্রামের গৃহবধূ মলিনাকে ওই রাস্তায় একটি ছাগল তাড়া করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘সোবায় মিলি এই গাছগুলো এক ঘণ্টায় নাগাছি। এল্যা গাছগুলা যাতে গরু-ছাগল না খায় সে পেকেও (দিকে) খেয়াল থুইছি।’

কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আফজালুল হক বলেন, ‘গাছগুলো রক্ষার কার্যক্রম চলছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউএনওর নেতৃত্বে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে সভা করা হচ্ছে। গাছে দেওয়া হচ্ছে খুঁটি ও জাল।’

সয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম বলেন, ‘নিজের সন্তান যেভাবে মানুষ করি, ঠিক সেভাবেই গাছগুলোর যত্ন নিচ্ছি। গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব এন এম জিয়াউল আলম এসব গাছ দেখে গেছেন।’

ইকরচালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে গাছগুলো রক্ষায় খরচ করা হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, সরকার যদি আলাদাভাবে গাছগুলো রক্ষায় বরাদ্দ দিত, তাহলে ভালো হতো।