জলাবদ্ধতার সমস্যা, আছে মশার উপদ্রব

মৌচাকে চলছে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। এ কারণে এলাকা ধূলিধূসরিত। লোকজনকে পথ চলতে হয় নাকমুখ চেপে l ছবি: প্রথম আলো
মৌচাকে চলছে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। এ কারণে এলাকা ধূলিধূসরিত। লোকজনকে পথ চলতে হয় নাকমুখ চেপে l ছবি: প্রথম আলো

বুধবার বেলা ১১টা। ১১১, কাজি অফিস গলি, মগবাজার—এই ঠিকানায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বাসার খোঁজ করছিলেন সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা আকরাম হোসেন। কিন্তু এই এলাকায় কাউন্সিলরের কোনো কার্যালয় বা বাসভবন পাননি তিনি। অথচ ডিএসসিসির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে এই ঠিকানায় কাউন্সিলরের বাসা।

আকরাম হোসেন বলেন, ছেলের জন্মনিবন্ধনের জন্য কাউন্সিলরের কার্যালয় খুঁজছেন তিনি। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ডিএসসিসির ওয়েবসাইট থেকে কাউন্সিলরের বাসার ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। তিনি প্রথমে রমনা থানার সামনের একটি বিপণিবিতানে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে যান। কিন্তু কার্যালয় ছিল তালাবদ্ধ। পরে তিনি কাউন্সিলরের বাসার খোঁজে বের হন। পরে দুপুর ১২টা নাগাদ ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা ঠিকানা থেকে এক কিলোমিটার দূরে মগবাজারের ডাক্তার গলিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সন্ধান পান তিনি।

কাজি অফিস গলির বাসিন্দা শফিউল আলম, মহিউদ্দিন ও দোকানি রতন তালুকদার বলেন, কাউন্সিলরের খোঁজে এই গলিতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন লোক আসেন। কিন্তু তাঁরা কাউন্সিলরকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। এ ছাড়া মহল্লার বেশির ভাগ মানুষই তাঁর কার্যালয়ের অবস্থান জানেন না। এতে জন্মনিবন্ধনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মগবাজারের ডাক্তার গলির উত্তর পাশে ১৭৮ নম্বর বাড়ির একটি ছোট কক্ষে কাউন্সিলরের কার্যালয়। গতকাল দুপুরে কার্যালয়ের ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, কাউন্সিলরের কার্যালয়টি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সীমানার মধ্যে পড়েছে।

মিন্টু রোড, কাকরাইল, সার্কিট হাউস রোড, সিদ্ধেশ্বরী রোড ও লেন, মগবাজার এলিফ্যান্ট রোড, মগবাজার ইস্পাহানি কলোনি, নিউ ইস্কাটন রোড, ইস্কাটন গার্ডেন রোড, আমিনাবাদ কলোনি ও ইস্টার্ন হাউজিং অ্যাপার্টমেন্ট, বেইলি স্কয়ার ও বেইলি রোড, ডিআইটি কলোনি ও পশ্চিম মালিবাগ নিয়ে ডিএসসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এসব এলাকায় মশার উপদ্রব, পশ্চিম মালিবাগে জলাবদ্ধতা, মৌচাক-মগবাজার উড়ালসেতুর নিচে চার বছরের বেশি সময় ধরে খোঁড়াখুঁড়ি, বাতাসে ধুলাবালুসহ বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা রয়েছে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, মৌচাক-মালিবাগ উড়ালসেতু নির্মাণের জন্য আউটার সার্কুলার রোডের মৌচাক ও মালিবাগে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। সড়কের এই অংশে পানি জমে আছে। তা মাড়িয়ে চলাচল করছেন পথচারীরা। এ ছাড়া সড়কের অন্য অংশে প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালু উড়ছে। পথচারীরা নাকমুখ চেপে চলাচল করছেন।

মৌচাক মার্কেটে কেনাকাটা করে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন সানাউল আলম দম্পতি। এ সময় কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এই উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণে সারা বছর মৌচাক মার্কেটের সামনের সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অন্যান্য সড়কে ব্যাপক ধুলাবালি ওড়ে। এতে সড়কের দুই পাশের বাসাবাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয়।

ওয়ার্ডে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেইলি রোডের বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, মাসে গড়ে একবারও তাঁদের এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। অথচ দিনে দিনে মশার উপদ্রব বাড়ছে।

দীর্ঘদিন ধরে পয়োনিষ্কাশন সংযোগ বন্ধ হয়ে পশ্চিম মালিবাগে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করেছেন এই এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই এলাকার পয়োনিষ্কাশন সংযোগগুলো প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো। এতে পয়োনিষ্কাশন লাইনে ময়লা পানির চাপ বাড়লেই সড়কে তা উপচে ওঠে। এই পানি মাড়িয়েই মহল্লার সবাইকে চলাচল করতে হয়।