ইবাদতের পাশাপাশি উপহার সংস্কৃতি

পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়েছে বাহারি রুটি। বৃহস্পতিবার দয়াগঞ্জ থেকে ছবিটি তোলা l প্রথম আলো
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়েছে বাহারি রুটি। বৃহস্পতিবার দয়াগঞ্জ থেকে ছবিটি তোলা l প্রথম আলো

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার মিলব্যারাকের পাশের একটি গলি ধরে হেঁটে যাচ্ছে নয়-দশ বছরের দুই শিশু। দুজনের হাতেই দুটি থালাভর্তি রুটি, তরমুজসহ নানা খাবার। কোথায় যাচ্ছ, জানতে চাইলে সিয়াম আর সাদিক পরিচয় দিয়ে দুই শিশু বলে, শবে বরাতের খাবার দিতে যাচ্ছে খালার বাসায়।

পুরান ঢাকার অলিগলিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এমন দৃশ্য ছিল বেশ স্বাভাবিক। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, আধুনিক ঢাকা থেকে হারিয়ে গেলেও শবে বরাতে আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীদের বাসায় খাবার পাঠানোর সংস্কৃতি এখনো টিকে আছে পুরান ঢাকায়।

ফরিদাবাদ থেকে শুরু করে সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, ওয়ারী, নারিন্দা, টিকাটুলি, দয়াগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ঘুরেও সেই প্রমাণ মিলল। এসব এলাকার মোড়ে মোড়ে শবে বরাত উপলক্ষে অস্থায়ী দোকান বসেছে। তাতে বড় বড় রুটিসহ নানা কিছু বিক্রি হচ্ছে। বাহারি সব রুটি; কুমির, মাছ, পাখি, ফুল নানা ছাঁচের। দোকানদারেরা বলেন, এগুলোকে ‘টাপ্পা বল’ বলে। কিন্তু এখন ‘ফেন্সি’ রুটি নামেই বেশি পরিচিত। বিক্রেতারা বলেন, এসব রুটির পাশাপাশি পুরান ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর একজন আরেকজনের বাড়িতে নিজেদের বানানো খাবারদাবারও পাঠায়।

পুরান ঢাকার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের কলতাবাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যাবসায়ী মোহাম্মদ রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকেই পুরান ঢাকায় শবে বরাতে উপহার পাঠানোর সংস্কৃতি দেখে আসছি। আরেকজনের বাড়িতে খাবারদাবার পাঠিয়ে আমরা আনন্দ পাই।’

নারিন্দা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মোহাম্মদ রানা বলেন, ‘আমরা বাবা-দাদার সময় থেকে দেখে আসছি শবে বরাতে খাবারদাবার পাঠানো। এগুলো হচ্ছে রমজানের প্রস্তুতি। এর মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় হয়।’

শুধু যে বাড়িতে বাড়িতে খাবার পাঠানো তা-ই নয়, শবে বরাতের রাতে পুরান ঢাকার লোকজনকে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেল। অবশ্য এই দলে শিশু-কিশোরেরাই বেশি। অনেকে হাঁটছে অনেকে আবার ভ্যান নিয়ে ঘুরছে। তবে বিভিন্ন মসজিদে নামাজ, ওয়াজ-মাহফিলেও অংশ নিয়েছেন তাঁরা। ইবাদতের পাশাপাশি চলে এই আদান-প্রদানের সংস্কৃতি।

মসজিদে মসজিদে নামাজ আদায় করা ছাড়াও অনেকে আবার মা-বাবার কবর জিয়ারত করেছেন। তাঁদেরই একজন মোহাম্মদ শাকিল। পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছয়-সাতজন শিশু-কিশোর ছিল। শাকিল বলেন, নিজের ছেলে, ভাগনে, ভাতিজা সবাইকে নিয়ে স্বামীবাগে মা-বাবার কবর জিয়ারত করেছেন। এখন সবাইকে নিয়ে ঘুরছেন। প্রতিবছরই এভাবে সারা রাত পার করে দেন। এরপর ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যান।