ভ্যাট হার দুটি হতে পারে

আগামী জুলাই থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হবে। তবে ভ্যাট হার নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গত রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয় ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি, রাজস্ব আদায়সহ সামগ্রিক পরিস্থিতি। গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় নতুন আইনের আওতায় দুটি ভ্যাট হার নিয়েও আলোচনা হয়।

ভ্যাট হার যাতে স্বস্তিদায়ক হয়, ওই সভায় অর্থমন্ত্রীকে এমন নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন আইনে অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হওয়ার কথা। বহাল থাকতে পারে এই হার। তবে যেসব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে; ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সেসব পণ্য ও সেবায় ভ্যাট হার হতে পারে ১২ বা ১৩ শতাংশ।

গত রোববারের বৈঠকে ১৫ শতাংশের পাশাপাশি এমন পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে আরেকটি সংকুচিত ভ্যাট হারের বিষয়েও আলোচনা হয়। এই তালিকায় কোন কোন পণ্য ও সেবা থাকতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বর্তমানে দেশি ব্র্যান্ডের পোশাক, রেস্তোরাঁ, বিদ্যুৎ বিলসহ ১৫ ধরনের সেবার ওপর দেড় থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হয়। আবার দৈনন্দিন জীবনের নিত্যপণ্য সয়াবিন ও পাম অয়েল আমদানি করলে আমদানি পর্যায়ে কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। এমএস রডের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণসামগ্রীর ওপর ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে ভ্যাট আরোপ হয়। নতুন আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে এসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়তে পারে।

বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলা ওই বৈঠকের শেষ পর্যায়ে নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় ভ্যাট হার নিয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি, বিভিন্ন দেশের ভ্যাট হার—এসব উঠে আসে। একপর্যায়ে পশ্চিমা একটি দেশে ২২ শতাংশ ভ্যাট থাকার কথাও বলা হয়। উন্নত দেশ ও বাংলাদেশের অর্থনীতি এক রকম নয়—এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১ শতাংশ ভ্যাট কমালে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় কমে যাবে। আলোচনার একপর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে যেসব পণ্য ও সেবায় দামের ওপর প্রভাব পড়বে—এমন পণ্য ও সেবার ওপর একটি সংকুচিত হারে ভ্যাট আরোপ নিয়ে আলোচনা হয়।

সভায় ভ্যাটের বিভিন্ন বিষয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী কিছু ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেননি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সকালে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) বার্ষিক সভায় যোগ দিতে সৌদি আরব গেছেন। আগামী শুক্রবার তিনি দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরে আসার পরই একক হার নাকি একাধিক ভ্যাট হার, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

উল্লেখ্য, ভ্যাটের দর্শন একক হার হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানে একাধিক ভ্যাট হার বিদ্যমান।

এ দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ের সব এখন পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার ধরেই হিসাব করা হচ্ছে। ভ্যাট হার কমানো হলে তা দ্রুত সমন্বয় করার প্রস্তুতিও আছে।

এ দিকে গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভ্যাট হার নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ী মহল খুশি হবে বলে আশা করছি। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়—কোনো ব্যবসায়ীর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না। অত্যন্ত সতর্কতা, গুরুত্ব ও সব দিক বিবেচনা করেই ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। আমরা (সরকার) মনে করছি, সন্তুষ্ট হবেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, ভ্যাটের আওতায় কিছু নতুন যোগ হবে।’

গত রোববারের সভায় প্রধানমন্ত্রী কী নির্দেশনা দিয়েছেন, তা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকেই ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেওয়া হচ্ছে। অনেক খাত ভ্যাটের আওতামুক্ত ছিল। যেহেতু নতুন আইন করা হচ্ছে, এতে যা করা হবে তা সহনীয় থাকবে। স্বস্তিদায়ক ভ্যাট হার দেওয়ার কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সেভাবেই করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার কিছু নেই। ভ্যাট নিয়ে টুকটাক কিছু করার দরকার হলে এনবিআরের সঙ্গে বসে অর্থমন্ত্রী ঠিক করবেন।’