খন্দকার মাহবুব ও মিলন দুই দিনের রিমান্ডে

পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা, ভাঙচুর ও বোমা হামলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নাকচ করে তাঁকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ঢাকার মহানগর হাকিম আমিনুল হক গতকাল বুধবার এসব আদেশ দেন। রমনা থানার পুলিশ বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই তিনজনকে আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে। তাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন। খন্দকার মাহবুব বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান।
রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন ৪ জানুয়ারি নির্বাচন বানচাল করতে আসামিদের উসকানি ও পরিকল্পনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা দিয়ে মারধর ও পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলা করে। ওই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিষয় জানতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে আসামিপক্ষে আইনজীবী রফিক-উল হক বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন একজন সম্মানিত ব্যক্তি ও আইনজীবী নেতা। খন্দকার মাহবুব দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা করেছেন, বিভিন্ন টক-শোতে তিনিও (রফিক-উল হক) সমালোচনা করেছেন। তিনি রাজনীতি করেন না বলে তাঁকে ধরেনি। উনি রাজনীতি করেন বলে ধরেছে। তিনি বলেন, ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হইচই শুরু করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসেনি। তাদের আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি ফাঁকা মাঠে গোল হয়েছে—এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।
এ সময় রফিক-উল হক বলেন, শুধু তিনি বলেননি, ভারত ছাড়া সারা পৃথিবী এই নির্বাচনের সমালোচনা করেছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, এজাহারে এই তিন নেতার নাম নেই। তাঁদের রিমান্ডে নেওয়ার মতো কোনো উপাদানও নেই। তাই রিমান্ড আবেদন বাতিল করে তাঁদের জামিন দেওয়া হোক। শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে আরও শুনানি করেন মহানগর সরকারি কৌঁসুলি শাহ আলম তালুকদার, রেজাউল করিম, রিজাউর রহমান, মাহফুজুর রহমান, ওমর ফারুক প্রমুখ। আসামিপক্ষে ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া, মাছুদ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা খান, মহসিন মিয়া, ইকবাল হোসেন ও জসীম উদ্দিন প্রমুখ আইনজীবী।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিকেলে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা পাল্টা মিছিল করেন।
গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে খন্দকার মাহবুব হোসেনকে, সেলিমা রহমানকে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে এবং ফজলুল হককে বারিধারায় জয়নুল আবদিন ফারুকের ব্যবসায়িক কার্যালয় থেকে আটক করা হয়।
মুক্তি দাবি: খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সব আইনজীবীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এ জে মোহাম্মদ আলী। গতকাল বার কাউন্সিল মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বিচারে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ, যা জাতির বিবেক আইনজীবী সমাজ মেনে নিতে পারে না। তিনি বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে খন্দকার মাহবুবসহ সব আইনজীবীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বার কাউন্সিলের অর্থবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান সানাউল্লা মিয়া ও হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে খন্দকার মাহবুবসহ বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং বাংলাদেশ জাতীয় আইনজীবী সমিতি।