চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবদুল মালেক চৌধুরী ওরফে জনি হত্যা মামলার কোনো কূলকিনারা হয়নি এক বছরেও। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হওয়ায় এগোচ্ছে না তদন্ত। নয় আসামির মধ্যে পুলিশ এক বছরে একজনকেও গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো আসামিরা মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দিচ্ছে।
এদিকে নিহতের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে এখনো চলছে মাতম। জনির বড় বোন স্কুলশিক্ষিকা সালেহা বেগম চৌধুরী বলেন, ‘আমার ভাই সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি করত। অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সে সব সময় সোচ্চার ছিল।’ মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য আবু সাদাত মো. সায়েম, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম ফরহাদুল আলম, মহিউদ্দিন মহি ও আবু জাহেদ এবং ছাত্রলীগের কর্মী শামীম, কফিল উদ্দিন, মনির উদ্দিন, নোমান ও মোহাম্মদ ফারুক। ঘটনার পর আবু সাদাত মো. সায়েম, আ ন ম ফরহাদুল আলম, মহিউদ্দিন ও আবু জাহেদকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লায় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আবদুল মালেক চৌধুরীর ওপর হামলা চালানো হয়। চার দিন পর ৮ জানুয়ারি ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই আবদুল মাজেদ চৌধুরী বলেন, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ বলছে, তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হওয়ায় তদন্ত চলছে ধীরগতিতে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশ নয় আসামির মধ্যে একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আসামিরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ায় থানায় জিডি করেছি।’
সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হলেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী হওয়ায় কোনো চাপে আছেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে কোনো সদুত্তর মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন নগরের কোতোয়ালি থানায় ছাত্রলীগের নয়জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পাঁচ মাস পরও কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় এবং তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় মামলাটি গত বছরের ৮ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু তার পরও তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এজাহারভুক্ত তিন আসামি ফরহাদুল আলম, ফারুক ও নোমান উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত ৩১ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন। কিন্তু সেদিন আসামিরা হাজির না হওয়ায় আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।
বাদীর অভিযোগ, আসামিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যোগদান করে যাচ্ছেন। আসামি মো. ফারুক অন্য আসামিদের নিয়ে পটিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। আসামি মহিউদ্দিন প্রকাশ্যে মিছিল সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। গত ২৮ অক্টোবর পটিয়ার শান্তিরহাটে হরতালবিরোধী পথসভায় বক্তব্য দিয়েছেন মহিউদ্দিন।