চা বিক্রেতা থেকে সফল ফলচাষি মমতাজুলের গল্প

লোহাগাড়া উপজেলার পুঁটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দা গ্রামে নিজের গড়া আমবাগানে মমতাজুল ইসলাম। ছবিটি ১৯ মে তোলা l প্রথম আলো
লোহাগাড়া উপজেলার পুঁটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দা গ্রামে নিজের গড়া আমবাগানে মমতাজুল ইসলাম। ছবিটি ১৯ মে তোলা l প্রথম আলো

লোহাগাড়া উপজেলার পুঁটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দা গ্রামের মমতাজুল ইসলাম একসময় ছোট চায়ের দোকান করে কোনোমতে সংসার চালাতেন। তবে এখন অবস্থা পাল্টেছে। বাড়ির পাশের পাহাড়ি জমিতে আমের বাগান ও নার্সারি করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাগানের আম এবং নার্সারির চারা বিক্রি করে এখন বছরে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় করেন।

 লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে পুঁটিবিলা ইউনিয়নের পহরচান্দায় মমতাজের আমের বাগান। বাগানে পৌঁছানোর রাস্তা বেশ দুর্গম। উপজেলা সদর থেকে অটোরিকশায় রওনা দিয়ে সাত কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কে প্রথমে যেতে হবে কলাউজান। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার লম্বা কাঁচা রাস্তা ধরে গেলেই পহরচান্দা গ্রাম। পহরচান্দা গ্রামে পৌঁছে রাস্তা থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই চোখে পড়বে ছোট টিলাজুড়ে মমতাজের আমের বাগান।

১৯ মে সকালে মমতাজের বাগানে ঢুকতেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ছোট-বড় গাছে ধরেছে নানা জাতের আম। এর মধ্যে আম্রপালি জাতের আমও দেখা গেল। আম পাকা শুরু করলেও কিছু কিছু গাছের আম পরিপক্ব হয়েছে। বাগানে চারজন শ্রমিকের পাশাপাশি মমতাজুল নিজেও কাজ করছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে শোনালেন তাঁর সাফল্যের গল্প।

মমতাজুল ইসলাম জানান, দারিদ্র্যের কারণে তিনি লেখাপড়া করেছেন চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। ১৯৮৪ সালে বাড়ির সামনের রাস্তায় পাটি বিছিয়ে চা-বিস্কুট বিক্রি শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে দোকানের জন্য মাটির ঘরও তোলেন। ১৯৯৬ সালে চা দোকানটি পাকা করেন তিনি। স্বপ্ন ছিল একটা বাগান গড়ে তোলার। সে জন্য অল্প অল্প করে টাকাও জমিয়েছেন। ২০১০ সালে জমানো টাকা দিয়ে বাড়ির পাশে ২৪০ শতক পাহাড়ি জায়গায় ৫০০ আমের চারা রোপণ করেন। তিন বছরের মাথায় বাগানের পাশেই আমের চারার নার্সারিও তৈরি করেন তিনি।

মমতাজুলের কাছ থেকে জানা গেল, তাঁর বাগানে আম্রপালি, রুপালি, মল্লিকা ও মিয়ানমারের রাঙ্গুয়াই জাতের আমের গাছ রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে বাগানে আমের ফলন হচ্ছে। গত বছর বাগানের ১২৫ মণ আম বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি মণ আম বিক্রি হয়েছে ১৬০০ টাকায়। সব মিলিয়ে আয় হয়েছে দুই লাখ টাকা। খরচ বাদে লাভ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ। এ ছাড়া নার্সারি থেকে বিভিন্ন জাতের আমের চারা বিক্রি করেও ভালো লাভ পেয়েছেন।

মমতাজুল জানান, গত বছর প্রতিটি আমগাছে গড়ে ৮০ থেকে ১০০ কেজি আম ধরেছে। তবে এমন ফলন পেতে বেশ পরিশ্রম করতে হয় তাঁকে। বছরের চার-পাঁচ মাস ধরে দৈনিক ৪০০ টাকা বেতনে চারজন শ্রমিক কাজ করেন তাঁর বাগানে। মাঘ মাস থেকে শ্রমিকেরা কাজে লেগে পড়েন। এ সময় শুরু হয় বাগান ও গাছ পরিষ্কার এবং নিয়ম করে পানি দেওয়া। এ ছাড়া মুকুল এলে পোকা দমন করতে ছিটাতে হয় কীটনাশক।

মমতাজুল ইসলাম বলেন, নিজে পড়তে পারেননি বলে আক্ষেপ ছিল। কিন্তু এখন বাগানের আয় দিয়ে ছয় ছেলেকে তিনি লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।

চকরিয়ার ফল ব্যবসায়ী মনির আহমদ গত বছর ৬০ হাজার টাকার আম কিনেছেন মমতাজুলের কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘মমতাজুলের আম ভালো হওয়ায় চকরিয়া থেকে এসে তাঁর বাগানের আম কিনেছি। ৬০ হাজার টাকার আম কিনে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।’

পুঁটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ জানান, পুঁটিবিলার পহরচান্দায় মমতাজুলের দেখাদেখি অনেকে আমবাগান করেছেন। এসব বাগানের আশপাশের রাস্তাঘাট সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে আমচাষিরা সহজে বাগানের ফল বাজারে নিয়ে যেতে পারেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন জানান, মমতাজুল সফল আমচাষি। তিনি নিজ উদ্যোগে আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। তবে কৃষি অফিস এ ব্যাপারে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছে।