গাড়ি চলাচলে বিশৃঙ্খলা, বাড়ছে যানজট

সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওঠানামা করা হচ্ছে যাত্রী। পেছনে আটকে আছে অন্য গাড়ি। সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খল অবস্থার। ছবিটি গতকাল দুপুর ১২টায় সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের মুরাদপুর থেকে তোলা l জুয়েল শীল
সড়কের ওপর আড়াআড়িভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওঠানামা করা হচ্ছে যাত্রী। পেছনে আটকে আছে অন্য গাড়ি। সৃষ্টি হয়েছে বিশৃঙ্খল অবস্থার। ছবিটি গতকাল দুপুর ১২টায় সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের মুরাদপুর থেকে তোলা l জুয়েল শীল

গতকাল দুপুর ১২টা। নগরের সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের মুরাদপুর মোড়। উত্তর পাশে বেশির ভাগ অংশ দখল করে দাঁড়িয়ে আছে বহদ্দারহাটগামী কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস। যাত্রী ওঠানামায় নিজেদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। আর পেছনে আটকে আছে অন্য যানবাহন। মিনিট দশেক পর মুক্তি পেয়েছে পেছনের গাড়িগুলো। ততক্ষণে গাড়ির সারি ছাড়িয়ে গেছে মোড় থেকে বেশ কিছু দূর। অথচ মোড়েই কর্মরত আছে ট্রাফিক পুলিশ। সেদিকে তার খেয়ালই নেই।

 মুরাদপুর থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বের জিইসি মোড়ের দিকে আসতে দেখা গেল, ২ নম্বর গেটেও একই অবস্থা। জিইসি যাওয়ার পথে বিপণিকেন্দ্র সানমার ওশান সিটির আশপাশে সড়কের ওপরই পার্কিং করে রাখা হয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। ফলে অন্য গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। সংকীর্ণ পথে লেগে যাচ্ছে যানজট।

কথা হয় সানমারের ওশান সিটির সামনে যানজটে আটকে পড়া রিকশাযাত্রী গৃহিণী নুসরাত সুলতানার সঙ্গে। তিনি চার বছরের ছেলেকে নিয়ে জিইসি মোড়ের বিপণিকেন্দ্র সেন্ট্রাল প্লাজায় যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির বাসা থেকে এই পথের দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের কম। রিকশায় উঠেছি আধা ঘণ্টার মতো হচ্ছে। এখনো সানমারে আটকে আছি। বাচ্চাটা ঘামতে ঘামতে কাহিল অবস্থা।

সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার উড়ালসড়ক নির্মাণের জন্য এমনিতেই পথ সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। নির্মাণকাজের জন্য সড়কের মাঝ বরাবার কিছু অংশ টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। তার ওপর সড়কের মাঝখানে যাত্রী ওঠানামা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা।

এক সপ্তাহ ধরে নগরে যানজট বেড়েছে। কয়েকটি মোড় ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়। যানজট নিরসনে গত মঙ্গলবার সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল এবং নগরের ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারাও আলোচনায় বসেছেন। তাঁরা যানজটের বেশ কিছু কারণ নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বিভিন্ন সড়কের মোড়ে গণপরিবহন তথা বাস আড়াআড়িভাবে রেখে যাত্রী ওঠানামা, নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও দিনের বেলায় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে অবাধে পণ্য পরিবহন করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং ফুটপাত ও রাস্তার একাংশ হকারদের দখলে চলে যাওয়া। সিটি করপোরেশনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ওই সমন্বয় সভায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নগরের যানজট পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে গত সোমবার বিকেলে নগরের ইপিজেড মোড়ে দেখা যায়, মোড়ের গোল চত্বরের চারদিকে পথচারীরা রাস্তা পারাপার হচ্ছে। কেউ সেখানে পদচারী–সেতু (ওভার ব্রিজ) ব্যবহার করছে না। এতে সড়কের উভয় দিকে যানজট লেগে গেছে। এতে বিমানবন্দর থেকে নগরগামী গাড়ির সারি সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত চলে গেছে।

পতেঙ্গগামী একটি বাসের যাত্রী মো. হাসান বলেন, ‘গরমের সঙ্গে যানজটের ভোগান্তি আমাদের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে।’

বিমানবন্দর সড়কের ইপিজেড মোড়ের যানজটে প্রায়ই দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। গত মঙ্গলবার দুপুরের চিত্র l প্রথম আলো
বিমানবন্দর সড়কের ইপিজেড মোড়ের যানজটে প্রায়ই দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। গত মঙ্গলবার দুপুরের চিত্র l প্রথম আলো

ইপিজেড-সংলগ্ন বন্দরটিলার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ইপিজেড মোড় এবং সল্টগোলা পার হতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। এখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। ট্রাফিক বিভাগ পুরোপুরি ব্যর্থ। তিনি আরও বলেন, শুধু শ্রমিক পারাপার নয়, বড় প্রাইম মুভার ও কাভার্ড ভ্যান রাস্তা দখল করে নিয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।

ইপিজেড মোড়ে রাস্তা দিয়ে পথচারী পারাপার বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন। রোজার মধ্যে গোল চত্বরের চারদিকে রাস্তার বিভাজকের ওপর বেড়া দেওয়া হবে, যাতে কেউ যেন রাস্তা পারাপার হতে না পারে। পদচারী–সেতু ব্যবহারে পথচারীদের বাধ্য করা হবে বলে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবারের সমন্বয় সভায় জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে নগরের মোড়গুলোতে যাত্রীবাহী বাসের প্রতিযোগিতা বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) দেবদাস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, মোড়গুলোতে একটির পেছনে আরেকটি বাস আড়াআড়িভাবে দাঁড়ায়। এতে পেছনের গাড়ি আটকে যায়। বাস স্টপেজ মোড় থেকে একটু দূরে সরিয়ে নিতে হবে। সেখানে যাত্রী ওঠানামার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা প্রয়োজন।

নগরের যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যানজটের আরেকটি কারণ বলে সিটি মেয়র নাছির উদ্দীন মনে করেন। এ জন্য নগরের বিভিন্ন সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি মঙ্গলবারের সমন্বয় সভায় বলেছেন, নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে কেউ রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করলে পুলিশকে ভূমিকা রাখতে হবে। পুলিশ কাজ করলে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ হবে।