নদীর তীর ও মৎস্য অভয়াশ্রম ঝুঁকিতে ফেলে বালু উত্তোলন

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় টাঙ্গন নদের মৎস্য অভয়াশ্রমের ভেতরে খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদের পার ভেঙে যাওয়াসহ অভয়াশ্রমের জলমহাল ও মাছের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এ বলা হয়েছে, ‘বালু ও মাটি উত্তোলনে ড্রেজিংয়ের ফলে নদ-নদীর তীর ভাঙ্গনের শিকার হতে পারে, এরূপ স্থান থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করা যাবে না।’ অথচ আইনের তোয়াক্কা না করে এবং মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই এক মাসেরও বেশি সময় ধরে টাঙ্গন নদের ‘ভণ্ডমণি’ অভয়াশ্রমের ভেতরে একটি ভাসমান খননযন্ত্র বসিয়ে নদের তলদেশে গভীর গর্ত করে বালু তোলা হচ্ছে। এ বালু দিয়ে নদের পূর্ব পাশে একটি নির্মাণাধীন হ্যাচারি ভরাট করা হচ্ছে।
ভণ্ডমণি অভয়াশ্রম কমিটির সভাপতি আবদুর রহিম, দপ্তর সম্পাদক ফজলে হকসহ কয়েকজন মৎস্যজীবী বলেন, ভণ্ডমণি অভয়াশ্রমের ভেতর থেকে বালু তুলছেন নদের পূর্ব পাশের আমবাগান ও ইটভাটার মালিক আবু জাহিদ। ভণ্ডমণি মৎস্য অভয়াশ্রমের পূর্ব পাশে তাঁর আমবাগানের কাছে একটি বড় হ্যাচারি তৈরি হচ্ছে। ড্রেজার দিয়ে নদের বালু তুলে তিনি ওই হ্যাচারি ভরাট করছেন।
সরেজমিনে ১৯ মে দুপুরে দেখা গেছে, ভামদা টাঙ্গন নদের ভণ্ডমণি মূল অভয়াশ্রমের পশ্চিম দিকের পার দক্ষিণ দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেঙে গেছে। নদের পশ্চিম কিনারে মূল স্রোতধারার মাঝবরাবর একটি ভাসমান খননযন্ত্র বসিয়ে নদের বালু তোলা হচ্ছে। খননযন্ত্রের ডেলিভারি পাইপ বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে ওই হ্যাচারিতে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ফেলা হচ্ছে নদের বালু।
টাঙ্গন নদ গাঞ্জনদহ মৎস্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন সংগঠনের সম্পাদক নগেন চন্দ্র রায় ১৯ মে বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘কমিটির অনুমতি না নিয়েই অভয়াশ্রম থেকে বালু ওঠাচ্ছেন ওই ব্যক্তি। বালু তোলার কারণে অভয়াশ্রমের মাছের ক্ষতি হবে। এ ছাড়া নদের তীরও ভেঙে পড়বে। কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেব।’
ভণ্ডমণি অভয়াশ্রম কমিটির কয়েকজন মৎস্যজীবী সদস্যের অভিযোগ, এ সময় মা মাছেরা ডিম দেওয়ার জন্য তাদের পছন্দের জায়গা বেছে নেয়। কিন্তু অভয়াশ্রমের ভেতরে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলার কারণে নদের অভয়াশ্রমের শান্ত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ডিম দেওয়ার জায়গা হারিয়ে মা মাছেরা তাদের ঠিকানা হারিয়ে যেখানে-সেখানে বিচরণ করছে। এতে রাতের বেলা লোকজন গোপনে জাল ফেলে এসব মাছ শিকার করছেন। এ ছাড়া নদের পশ্চিম পার ভেঙে যাচ্ছে।
খননযন্ত্রের মালিক আবু জাহিদ বলেন, ‘অভয়াশ্রমের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য নদের মাঝখানে ড্রেজার বসিয়ে আমার হ্যাচারির জন্য বালু উঠাচ্ছিলাম। হ্যাচারির কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর নদ থেকে বালু তোলা হবে না।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সারওয়ার মোর্শেদ ২০ মে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বালুমহাল ঘোষণা না করা পর্যন্ত নদ থেকে বালু তোলা যাবে না। কেউ এ আইন অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইসমত আরা বলেন, অভয়াশ্রমে পানি কমে গেলে ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে খনন করা যেতে পারে। যাতে মাছের প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য চারিদিকে নেট দিয়ে ঘিরে তার ভেতর থেকে বালু তুলতে হবে। এ নিয়মের বাইরে খনন করা যাবে না। এ ছাড়া নদ থেকে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তোলাও বেআইনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, নদের জায়গাটা ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও সেখান থেকে বালু তুলতে অনুমতি লাগবে।