সিলেটে ফুটপাত দখলদারদের শনাক্ত করতে নির্দেশ

জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে ফুটপাত অবৈধ দোকানে ছেয়ে গেছে। ছবি: আনিস মাহমুদ
জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে ফুটপাত অবৈধ দোকানে ছেয়ে গেছে। ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণসহ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিটি করপোরেশন কার্যালয় অবৈধ স্থাপনায় ‘অবরুদ্ধ’ হওয়ায় দখলদার এবং নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালীদের নাম, ঠিকানা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো শুনানি শেষে এ নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতসংলগ্ন ১০০ থেকে ৫০০ গজের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও সিলেট সিটি করপোরেশনের কার্যালয়।

আদালতের মূল ফটকের দুপাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকান। ছবি: আনিস মাহমুদ
আদালতের মূল ফটকের দুপাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকান। ছবি: আনিস মাহমুদ

মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতের বেঞ্চ সহকারীর দপ্তর সূত্র জানায়, ৮ মে জেলা আইনজীবী সমিতি এক সভা করে সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দপ্তরের সামনের ফুটপাত অবৈধ স্থাপনার দখলে চলে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। সমিতির পক্ষ থেকে সভার কার্যবিবরণীসহ এ ব্যাপারে সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে একটি আবেদন করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণসহ সরকারি তিনটি দপ্তর ও নগরের কেন্দ্রস্থলের কোর্ট পয়েন্টে ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনার বিষয়টি আদালতের নজরে এনে প্রতিকার চাওয়া হয়।

আদেশের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রায় ছয় মাস ধরে সিলেটের সব আদালত প্রাঙ্গণ, বার সমিতির (আইনজীবী সমিতি) ভবনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলকারীরা স্থাপনা গড়ে তুলেছে। এর মধ্যে দোকান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড, মাছ ও সবজি বিক্রয় কেন্দ্র প্রভৃতি রয়েছে। এতে আদালতের কর্মচারী, বিচারপ্রার্থীদের ও আইনজীবীদের স্বাভাবিক যাতায়াতে ব্যাঘাত ঘটছে।

ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা নিয়ে প্রথম আলোয় একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়টি আদেশে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতিপূর্বে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোসহ স্থানীয় একাধিক দৈনিকে সরেজমিনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কারো কোনো টনক নড়েনি।’

অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রেহাই পায়নি জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনের ফুটপাতও। ছবি: আনিস মাহমুদ
অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রেহাই পায়নি জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনের ফুটপাতও। ছবি: আনিস মাহমুদ

আদেশে বলা হয়, উল্লিখিত সরকারি ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, আদালত প্রাঙ্গণের মতো স্থান অবৈধ স্থাপনায় অবরুদ্ধ। নগরের কেন্দ্রস্থলের কোর্ট পয়েন্ট থেকে শুরু করে বন্দরবাজার পর্যন্ত ফুটপাত অবৈধ দখলকারীদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘদিন ধরে এরূপ জনস্বার্থবিরোধী অবস্থা বিরাজ করার পরও নাকের ডগায় থাকা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন প্রশাসন কী কারণে নির্বিকার এবং নির্লিপ্ত—তা আদালতের কাছে বোধগম্য নয়। কারা, কীভাবে অবৈধ ও বেআইনিভাবে দখলদারি বজায় রেখেছে, তাদের এবং নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালীদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় শনাক্তপূর্বক সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রকে তদন্ত করতে বলেছেন আদালত।

আদালত বলেন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে বিষয়টি আদালতের নিকট প্রতীয়মান হবে যে উপরিউক্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের সহযোগী।

বেলা আড়াইটার দিকে আদালতের আদেশ কপি সিটি করপোরেশনের হাতে পৌঁছেছে বলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান। পদক্ষেপ সম্পর্কে মেয়র প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদেশ পেয়েই আমি কোতোয়ালি থানার ওসিকে নিয়ে প্রথম বৈঠক করেছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ফুটপাতে অবৈধ দখলদার, নেপথ্যে থাকা দখলদার পক্ষের ব্যক্তিদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় যথাযথভাবে তৈরি করে সাত দিনের মধ্যে দাখিল করার ব্যবস্থা করা হবে।’