সাক্ষ্য দিতে এসে আবেগাপ্লুত মন্ত্রী, কেঁদে আকুল

হত্যাচেষ্টা ও খুনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। ছবিটি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালত থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীল
হত্যাচেষ্টা ও খুনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। ছবিটি বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম আদালত থেকে তোলা। ছবি: জুয়েল শীল

২৫ বছর আগে নিজ দলের দুই কর্মীকে খুনের ঘটনার মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে কেঁদেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানায় করা মামলায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সপ্তম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা ফেরদৌস আরার আদালতে তিনি সাক্ষ্য দেন। একই আদালতে ওই মামলার বাদী ও মন্ত্রীর তৎকালীন গাড়িচালক মো. ইদ্রিস সাক্ষ্য দেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ৮ মে দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলার আজাদী বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন। র‍্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় দেড় শতাধিক লোক হামলা চালালে সম্মেলন পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় গুলিতে জমির উদ্দিন নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হন। বিকেলে মন্ত্রী মোশাররফসহ নেতা-কর্মীরা ফটিকছড়ি কলেজ মাঠে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তির জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। জানাজায় গোলাগুলি শুরু করলে তাঁরা ফটিকছড়ি থানায় আশ্রয় নেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাউজান হয়ে চট্টগ্রাম শহরে ফেরার জন্য ফটিকছড়ির মো. তকির হাট হয়ে তাঁরা আসছিলেন। এ সময় শিবির নাছিরের নেতৃত্বে ফের গাড়ি আটকে ভাঙচুর ও হামলা চালানো শুরু হয়। মন্ত্রী মোশাররফ গাড়ি থেকে নেমে কারণ জানতে চাইলে তাঁর বুকে অস্ত্র ধরেন নাছির। একপর্যায়ে তাঁর গাড়ি থেকে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশরকে নামিয়ে গুলি করেন নাছির। ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। মন্ত্রী মোশাররফসহ অন্যরা দৌড়ে পাশের ঝোপে আশ্রয় নেন। এ ঘটনায় মোশাররফের ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. ইদ্রিস বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় শিবির নাছিরসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ১৯৯৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে ৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ২০০২ সালের ২৫ জুন আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরু করেন। ইতিমধ্যে আসামিদের মধ্যে মারা যান আটজন। বাকি ২৩ আসামির মধ্যে শিবির নাছিরসহ চারজন আজ আদালতে হাজির হন। অন্যরা পলাতক। তাঁরা সবাই নাছিরের সহযোগী।

সরকারি কৌঁসুলি রুবেল পাল প্রথম আলোকে বলেন, নিজ দলের দুই কর্মীকে খুনের মামলায় মন্ত্রী মোশাররফ ও তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. ইদ্রিস সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় মন্ত্রী আদালতে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। এ সময় এজলাসে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে।

মন্ত্রী আদালতকে বলেন, দিনদুপুরে খুন করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থানার সামনে দিয়ে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল শিবির নাছিরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। অবাক লাগে, পুলিশ তাদের দেখেও নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেনি। পুলিশ শুধু দেখে ছিল। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সেদিন বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারেননি। মন্ত্রী তাঁর সামনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশরকে গুলি করে মারা হয়েছে বলতে না বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। মন্ত্রী সাক্ষ্যে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে তাঁকে জেরা করেন আসামির আইনজীবীরা। এরপর মামলার বাদী সাক্ষ্য দিলে তাঁকেও জেরা করা হয়। আজ দুজনসহ এ মামলায় ৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

এদিকে মন্ত্রীর আদালতে আসার খবর শুনে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী, নেতা-কর্মী এবং সরকারি কৌঁসুলিরা আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, নাছিরের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টিতে খালাস পেয়েছেন। বিচারাধীন রয়েছে ১৯টি মামলা। সাজা হয়েছে একটি মামলায়। অস্ত্র মামলায় ২০০৮ সালে আদালত নাছিরকে অস্ত্র রাখায় ১০ বছর ও গুলি রাখায় ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে দুটি সাজা একসঙ্গে চলায় তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। রায়ে কারাবাসের সময় সাজা হিসেবে গণ্য হবে উল্লেখ ছিল। ১৯৯৮ সাল থেকে কারাগারে থাকায় এ মামলায় নাছিরের সাজা ভোগ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন হত্যা মামলায় নাছিরসহ সব আসামি খালাস পান। এর আগে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী ও হাটহাজারীর তিন খুনের মামলায় খালাস পান নাছির।