মনোবল বাড়িয়েছেন কণ্ঠসৈনিকেরা

দীর্ঘ নয় মাস কণ্ঠকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা অস্ত্র হাতে জীবনবাজি রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা আর মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন। তাঁরা সবাই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক। তাঁরা গান গেয়ে, কবিতা আবৃত্তি করে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল অটুট রাখতে নেপথ্যে কাজ করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গেন্ডারিয়া কিশলয় কচি-কাঁচার মেলা প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্মী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা, স্মৃতিচারণা, সুধীজনের বক্তব্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের।

বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ফ্রন্ট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। কণ্ঠসৈনিক হিসেবে কেউ গান গেয়েছেন, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন, চরমপত্র পাঠ করেছেন, কেউ প্রকৌশল বিভাগে কাজ করেছেন, নাটকের মাধ্যমে বাংলার ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। একত্র করেছেন সারা বাংলার সাধারণ মানুষকে।

অনুষ্ঠানে মঞ্চের সামনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ১০ জনের ছবি প্রদর্শন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী এবং এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিদের উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা দেয় কিশলয় কচি-কাঁচার মেলার খুদে শিল্পীরা।

কণ্ঠসৈনিক কামাল উদ্দিন আহমেদ স্মৃতিচারণায় বলেন, একাত্তরের এপ্রিলে তিনি আগরতলায় যান। পরবর্তী সময়ে কলকাতায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতারে যোগ দেন। ‘সোনায় মোড়ানো বাংলা মোদের শ্মশান করল কে’ গানটি গান। সে সময় কামাল উদ্দিন আহমেদ, আপেল মাহমুদ, স্বপ্না রায়, মনোয়ার হোসেন খান ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ গানটি গেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ওরা ১১ জন-এ তাঁদের গাওয়া গানটিই ব্যবহার করা হয়।

অপর শিল্পী শীলা ভদ্র বলেন, তাঁর আরও দুই বোন শিপ্রা ভদ্র ও শুক্লা ভদ্রও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কণ্ঠসৈনিক ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে হাসান ইমাম আসামাত্রই তাঁকে ঘিরে দাঁড়ায় কিশলয়ের ভাইবোনেরা। যেন সবার তাঁর সঙ্গে একটি ছবি থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন কিশলয় কচি-কাঁচার মেলার নুসরাত ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর মাঝে চলে স্মৃতিচারণা। দ্বিতীয় পর্বে ছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একটি নমুনা অধিবেশন।

একাত্তরের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর ভারতের সহযোগিতায় একটি ট্রান্সমিটার ও অনুষ্ঠান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা হয়। কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন ১১ জ্যৈষ্ঠ সকাল সাতটায় প্রথম এবং পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন প্রচার করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের তৃতীয় পর্যায়ের কার্যক্রম। এ কার্যক্রম ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পর ২ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।