বিনিয়োগের নিরাপত্তা চান চামড়াশিল্পের মালিকেরা

হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়াশিল্প সরিয়ে নেওয়া হলেও সরকার এখনো ব্যবসায়ীদের জমির নিবন্ধন বুঝিয়ে দেয়নি। সেখানে গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়নি। দ্রুত এসব সুবিধা নিশ্চিত করাসহ এই খাতে বিনিয়োগ করা ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার নিরাপত্তা দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

‘ট্যানারি স্থানান্তর ও বিনিয়োগের নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক সেমিনারে ব্যবসায়ীরা এই দাবি করেন। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফই) এবং লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিসি) যৌথভাবে গতকাল জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্পসচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সরকার ট্যানারি মালিকদের জমি নিবন্ধন করে দেওয়ার কাজ শেষ করবে। পাশাপাশি এই খাতের ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। তা ছাড়া যাঁরা এখনো ক্ষতিপূরণের সব টাকা পাননি, তাঁরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আবেদন করলে তাঁদের টাকা পরিশোধ করে দেওয়া হবে।

শিল্পসচিব বলেন, ‘চামড়াশিল্প হাজারীবাগে থাকায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছিল। চীন, ভিয়েতনামসহ বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগী দেশগুলো উন্নত বিশ্বকে এসব কথা বলায় রপ্তানি চাহিদা কমে যায়। এখন সাভারে এই শিল্প সরে যাওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। জুন মাসের মধ্যেই সেখানে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) কার্যক্রম শেষ করতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। তারা ঠিকমতো কাজ না করলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সবার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দ্রুত নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। যাঁরা প্লট পাননি, তাঁরা যেন দ্রুত প্লট পান, সেটা দেখা হবে। আর সাভারে যখন যে সমস্যা আসবে, সেগুলো সমাধান করা হবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ‘সাভারে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল, সেগুলো নিশ্চিত না করেই হাজারীবাগে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আমাদের সরানো হলো। আমার প্রশ্ন, এখন কি বুড়িগঙ্গা আর দূষিত হচ্ছে না? অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারণে কি নদীর সমস্যা হচ্ছে না? এখন আপনারা (পরিবেশবাদী) চুপ কেন?’

শাহীন আহমেদ বলেন, ‘সাভারে এখনো গ্যাস-বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হয়নি। কাউকে জমির নিবন্ধন বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারছেন না। আমরা এই খাতের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করা ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার নিরাপত্তা চাই। সে জন্য আমাদের সংকটগুলোর সমাধানসহ ৯ দফা দাবি মানতে হবে।’

গত মাসেই ট্যানারি শ্রমিক-মালিকদের দ্রুত শিল্পনগরীর প্লটের মালিকানা রেজিস্ট্রেশন, গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংযোগ নিশ্চিতকরণ, শ্রমিকদের আবাসন, এককালীন অর্থ বরাদ্দ, বিদ্যমান ঋণ ব্লক, সুদ মওকুফসহ এই ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ এই খাতের সম্ভাবনা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি বিএফএলএলএফইর চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে চামড়াশিল্পের রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার করতে চাই। এই খাতে ৪০ থেকে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এ জন্য আমাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিন। দ্রুত জমির নিবন্ধন বুঝিয়ে দিন।’

সভায় উপস্থিত বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, চামড়াশিল্পের শ্রমিক-মালিকদের স্বার্থ দেখতে হবে। হাজারীবাগে যেমন শ্রমিক-মালিক ভালো সম্পর্ক ছিল, সাভারেও যেন সেটা থাকে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।