টানা তিন দিন বন্ধ উৎপাদন অনিশ্চিত

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে টানা তিন দিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চিনিকলের বয়লার হাউসে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কবে নাগাদ পুনরায় উৎপাদন শুরু হবে, তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।
১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ১৯৩৮ সালে এই চিনিকলে উৎপাদন শুরু হয়। এরপর আর চিনিকলে নতুন যন্ত্রাংশ লাগানো হয়নি। ৭৫ বছরের পুরোনো যন্ত্র দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই চিনিকলের উৎপাদন কার্যক্রম। জরাজীর্ণ যন্ত্রাংশ দিয়েই গত বছরের ৬ ডিসেম্বর চিনিকলটিতে চলতি মাড়াই মৌসুমের আখমাড়াই ও চিনি উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। এর পরই চিনিকলে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।
চিনিকলের কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় মিলটির বয়লার হাউসের ৪ নম্বর বয়লারের ছাদ ভেঙে পড়লে সেখানে আগুন ধরে যায়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বুধবার বিকেল চারটায় বয়লার মেরামত করে উৎপাদন শুরু করার মাত্র আধা ঘণ্টার মাথায় আবারও বিপর্যয় দেখা দেয়। সেই থেকে চিনিকলের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আখ সংগ্রহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে চুক্তিভিত্তিক আট হাজার আখচাষি বিপাকে পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জরাজীর্ণ যন্ত্রাংশ দিয়ে চিনিকল চালাতে গিয়ে তাঁদের প্রায়ই দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। এই চিনিকলে প্রতি মৌসুমে চিনি উৎপাদন ক্ষমতা কাগজে-কলমে ১১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন হলেও যন্ত্রের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বছরে এক লাখ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে সাত হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যেভাবে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিচ্ছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা আদৌ পূরণ হবে কি না সন্দেহ। কর্মকর্তারা বলেন, এই কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব দেওয়া হলেও এর উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের কোনো আগ্রহ নেই।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবদুল কাইয়ুম গতকাল বিকেলে বলেন, ‘যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজুর রহমান কোম্পানির প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়ার রেনউইকে গেছেন। সেখানে যন্ত্রাংশ তৈরির কাজ চলছে। কত দিনে মিল চালু করা যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’