ডালে ডালে আঁকুরা হাসে

অাঁকুরা ফুলের ছবি (বাঁয়ে) গাজীপুরের ভাওয়াল জঙ্গল থেকে এবং ফলের ছবি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তুলেছেন লেখক
অাঁকুরা ফুলের ছবি (বাঁয়ে) গাজীপুরের ভাওয়াল জঙ্গল থেকে এবং ফলের ছবি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তুলেছেন লেখক

ভাওয়াল গড়ের বনজুড়ে যখন বসন্তে নতুন পাতা গজানো আর ফুল ফোটার মাতামাতি, ঠিক সে সময় গজারি বনের ফাঁকে ফাঁকে গাছের ডালে ডালে হাসতে দেখলাম আঁকুরার বুনো ফুলগুলোকে। সাদাটে ঘিয়া রঙের অজস্র ফুলে ডালের সারা গা ভরে আছে। সুগন্ধ পেয়ে ফুলের চারদিকে ঘুরঘুর করছে বুনো মৌমাছির দল। এরপর ধীরে ধীরে ডালগুলো পাতা ছাড়তে শুরু করে। আর পাতা গজানোর সঙ্গে সঙ্গে ফুলও কমতে থাকে। তবে সেসব ফুল থেকে গঠিত হতে থাকে মার্বেলের মতো গোটা গোটা ফল। গ্রীষ্মকালে সেসব ফল পেকে প্রথমে লালচে, পরে কালোজামের মতো হয়ে যায়। খোসা কালো, ভেতরে জামের মতো শাঁস। তবে শাঁসের রং জামের মতো বেগুনি নয়, সাদা। গাজীপুরের ভৌরাঘাটা গ্রামের বেশ কয়েকটা বাড়ির আঙিনায়ও দেখলাম আঁকুরাগাছের কিছু ছোট ঝোপ। ছোট ছেলেমেয়েরা বলল, ‘পাকলে ওসব ফল আমরা খাই, মজা লাগে।’ বাংলাদেশের বনে-জঙ্গলে জন্মে এমন অন্তত ৬০টি বুনো ফল আছে যেগুলো খাওয়া যায়। আঁকুরা তেমনই এক বনফল।

আঁকুরা মাঝারি আকারের বহু শাখায়িত পাতাঝরা প্রকৃতির বৃক্ষ। শীত এলেই গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বসন্তে ফুল ফোটে আর পাতারাও ফিরে আসে। পাতা উপবৃত্তাকার, অগ্রভাগ সুচালো, পাতা দৈর্ঘ্যে ৮-১২ সেন্টিমিটার। ফুল সুরভিত, মাখন সাদা, পাপড়ি পুরু ও রৈখিক। মার্চে গোছা ধরে ফুল ফোটে। ফল গোলাকার। পাকলে ফলের রং লাল ও শেষে কালো হয়ে যায়। পাকা ফল খাওয়া যায়। ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। বুনো ফল আর বুনো গাছ, এই তার পরিচয়। ঢাকায় ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেনে গাছটি আছে। যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে গাজীপুরে ভাওয়ালের জঙ্গলে। এ অঞ্চলের কোনো কোনো গ্রামীণ বনেও গাছটি দেখা যায়। আঁকুরার উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Alangium salvifolium Wing ও পরিবার Alangiaceae আঁকুরার অন্য নাম আঁকরকাঁটা। কেননা, গাছটায় অনেক কাঁটা আছে। এর ইংরেজি নাম Sage leaved Alangium. ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে এ গাছ দেখা যায়।