ঘূর্ণিঝড় 'মোরা' একই এলাকায় অবস্থান করছে

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সোমবার মধ্যরাতে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (১৪ নম্বর) বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।

বরগুনার তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙা এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র সংকেত প্রচার করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। ছবিটি সোমবার রাতে তোলা। ছবি: জসীম উদ্দিন
বরগুনার তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙা এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র সংকেত প্রচার করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। ছবিটি সোমবার রাতে তোলা। ছবি: জসীম উদ্দিন

এ ছাড়া মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৮ নম্বর মহা বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় মোরা উপকূল অতিক্রমের সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পর কক্সবাজার উপকূলের সমতপাড়া থেকে স্থানীয় লোকজন শহরের দিকে আসছেন। ছবিটি সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পর কক্সবাজার উপকূলের সমতপাড়া থেকে স্থানীয় লোকজন শহরের দিকে আসছেন। ছবিটি সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার থেকে ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি বয়ে যেতে পারে।

বরগুনার তালতলী উপজেলার অংকুজানপাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া উৎকণ্ঠিত নারী, পুরুষ ও শিশুরা। ছবিটি সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে তোলা। ছবি: এম জসীম উদ্দীন
বরগুনার তালতলী উপজেলার অংকুজানপাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া উৎকণ্ঠিত নারী, পুরুষ ও শিশুরা। ছবিটি সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে তোলা। ছবি: এম জসীম উদ্দীন

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে অতি সত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সকালে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং পরদিন তা ঘূর্ণিঝড় ‘মারুথা’য় রূপ নেয়। পরে সেটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে।

১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পর হাতের কাছে যতটুকু সম্বল আছে তাই নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন মানুষ। ছবিটি সোমবার রাতে কক্সবাজার শহরের প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয় থেকে তোলা। ছবি: আবদুল কুদ্দুস
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পর হাতের কাছে যতটুকু সম্বল আছে তাই নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন মানুষ। ছবিটি সোমবার রাতে কক্সবাজার শহরের প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয় থেকে তোলা। ছবি: আবদুল কুদ্দুস