বর্ধিত মেয়াদেও চুক্তি করেননি ৭৫ শতাংশ চালকল মালিক

চলতি বোরো চাল সংগ্রহ অভিযানে চুক্তির জন্য সময় বাড়ানো হলেও চুক্তি করেননি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সিংহভাগ চালকল মালিক। খাদ্য বিভাগ নির্ধারিত চুক্তি সম্পাদনের শেষ দিন ২০ মে পর্যন্ত মাত্র ৩২ জন চালকল মালিক চুক্তি করেছিলেন। এরপর গতকাল ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয় চুক্তি করার সময়সীমা। এই বর্ধিত সময়ে আরও ৪২ জন অর্থাৎ মোট ৭৪ জন মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অথচ উপজেলায় চালকল মালিক আছেন ৩০০ জন।

সরকার নির্ধারিত ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় সরকারি গুদামে চাল সরবরাহে বড় ধরনের লোকসান, এমনকি ব্যবসার পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় চালকল মালিকেরা নিবন্ধন বাতিলের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও চুক্তি করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। গতকাল বুধবার ছিল দ্বিতীয় দফা চুক্তির মেয়াদের শেষ দিন।

উপজেলা চালকল মালিকপক্ষের সভাপতি ইমদাদুর রহমান গতকাল জানান, উপজেলার ৩০০ চালকল মালিককে ২০ মের মধ্যে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে বাজারে চালের দাম অনেক বেশি থাকায় ২০ মে পর্যন্ত চালকলের মালিকদের অনেকেই চুক্তি করেননি। পরে খাদ্য বিভাগ চুক্তির মেয়াদ গতকাল ৩১ মে পর্যন্ত বাড়ায়। গতকাল পর্যন্ত মাত্র ২৪ ভাগের কিছু বেশি চালকল মালিক চুক্তি করেছেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলার ৩০০ চালকল থেকে ৬ হাজার ২৬৭ দশমিক ৯৯০ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বর্ধিত সময়ের শেষ দিন গতকাল রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ৭৪ জন চালকল মালিক চুক্তিপত্র জমা দিয়েছেন।

চাঁদপুর মিজু চালকলের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘লোকসান করে সরকারকে চাল দিতে গেলে মিলের লাইসেন্স বাঁচবে। কিন্তু ব্যবসার পুঁজি শেষ হয়ে যাবে। এসব চিন্তা করে আমি চুক্তি করিনি। লাইসেন্স বাতিল হোক। দরকার হলে মিল ব্যবসা ছেড়ে দিব।’

মা চালকলের মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত মঙ্গলবার আমার চালকলে ১০০ বস্তা চাল বের হয়েছে। প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচই পড়েছে ৩৮ টাকা। আরও কিছু খরচ আছে। সরকারনির্ধারিত দামে চাল দিতে গেলে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা লোকসান হবে। আমি শুধু লাইসেন্স বহাল রাখার জন্যই চুক্তি করেছি।’

উপজেলা চালকল মালিক নেতা ইমদাদুর রহমান গতকাল বলেন, ‘১৭ মার্চ চালকল মালিক গ্রুপের জরুরি সভায় চুক্তি করা না-করার ব্যাপারে আমরা কোনো মালিকের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিইনি। কারও ইচ্ছে হলে চুক্তি করতে পারেন। কেউ না করলে আমরা তাঁকে অনুরোধও করব না বলে জানিয়ে দিয়েছি। এ জন্য ২০ মে ৩২ জন মিলার চুক্তি করেন। আজকে (বুধবার) বর্ধিত মেয়াদের শেষ দিনে কিছু মিলার চুক্তি করেছেন। তবে আমি নিজেই চুক্তি করিনি।’

খটশিঙ্গার চালকল মালিক ইউসুফ আলী, মাঝখুড়িয়ার জালালউদ্দীন, কলিযুগের মিজানুর রহমান, অতরগাঁওয়ের আনোয়ার হোসেনসহ ৬-৭ জন চালকল মালিক জানান, গত ৫-৬ দিন আগে উপজেলার বিভিন্ন হাটে ব্রি ২৮ ও ২৯ জাতের ভেজা ধান প্রতি বস্তা ১ হাজার ৩৮০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও গত মঙ্গলবার থেকে দাম আরও বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল বুধবার পীরগঞ্জের কলেজহাট, কালিয়াগঞ্জহাটসহ কয়েকটি হাটে দুই মণ ওজনের প্রতি বস্তা ধানের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ধানের দাম দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল মমিন সরকার গত শনিবার রাত সাড়ে সাতটায় মুঠোফোনে ৭৪টি চুক্তিপত্র জমা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমি ২০ মে নির্ধারিত চুক্তির মেয়াদ ৩১ মে পর্যন্ত বর্ধিত করার মেসেজ পাওয়ার পর প্রত্যেক মিলারকে পৃথকভাবে চুক্তি করার জন্য অনুরোধ করেছি। আশা ছিল অন্তত দুই-আড়াই শ জন চুক্তি করবেন। কিন্তু তা হলো না।’