২০০ বছরের পুরোনো পুকুর বালু ফেলে ভরাট

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ২০০ বছরের পুরোনো একটি সরকারি পুকুর অবৈধভাবে ভরাট করা হচ্ছে। পাশের একটি খাল থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে বালু তুলে পুকুরে ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯৬ শতক আয়তনের ওই পুকুরটির প্রায় অর্ধেক ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের নেতৃত্বে এ কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামে পুকুরটির অবস্থান। এর উত্তর পাশে হোগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হোগলাকান্দি এলাকার এ খাস পুকুরটির গভীরতা ১০-১২ ফুট। পুকুরটিতে মাছ চাষের জন্য বাংলা ১৪২৩ সনে ২৭ হাজার ৩০০ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। ১৪২৪ সনের জন্য ইজারা দিতে গত ১৬ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তবে এ বছর ইজারা না হওয়ায় খাস কালেকশন করতে রূপসদী ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, খাল থেকে যন্ত্রের মাধ্যমে বালু তুলে পাইপে করে এনে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরের প্রায় ২০০ মিটার দূরে সরকারি খাল বয়ে গেছে। সেখান থেকে দুটি যন্ত্রের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে আনা হচ্ছে। কয়েকজন শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। আল আমিন ও জহিরুল হক নামের দুই শ্রমিক বলেন, গত ১৮ মে থেকে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। অর্ধেক ভরাট হয়ে গেছে। কাজ শেষ করতে আর দুই সপ্তাহ লাগবে।

বালু তোলার যন্ত্রের মালিক জহিরুল হক বলেন, ‘১০ হাজার টাকায় বাদল মেম্বারকে মেশিন ভাড়া দিয়েছি। বাদল (মো. মহিউদ্দিন বাদল) মেম্বারসহ গ্রামের লোকজন সরকারি পুকুরটি ভরাট করতাছে। আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তির একটি মেশিন এখানে কাজ করতাছে।’

মো. মহিউদ্দিন বাদল বলেন, ‘গ্রামের লোকজনের সিদ্ধান্তে হোগলাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের একটু জায়গা ভরাট করছি। পুকুর ভরাট করতে কাউকে জানানো হয়নি। গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা তুলে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের কয়েকজন বলেন, তাঁরা কেউ টাকা দেননি। তাঁরা শুনেছেন পুকুর ভরাট করে সেখানে দোকানঘর তোলা হবে।

রূপসদী ইউপির চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এ পুকুরটি দেখছি। এটি অনেক পুরোনো। বাপ-দাদার কাছে শুনেছি ওই পুকুরটি প্রায় দুই শ বছর আগের।’ পুকুরটি ভরাটের বিষয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য তিনি বেশ কিছুদিন ঢাকায় রয়েছেন। পুকুর ভরাটের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

রূপসদী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ (গতকাল বুধবার) হোগলাকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখেছি, পুকুরের অর্ধেকের বেশি বালু ফেলে ভরাট করা হয়ে গেছে। স্যার (সহকারী কমিশনার) আমাকে পাঠিয়েছিলেন পুকুর ভরাটের বিষয়টি দেখতে। তাদের এ কাজ বন্ধ করতে বলেছি।’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সোহাগ হোসেন বলেন, সপ্তাহখানেক আগে হোগলাকান্দি গ্রামের কিছু লোক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে গাইড ওয়ালের (সুরক্ষা দেয়াল)জায়গায় বালু ফেলার অনুমতি চেয়েছিলেন। তবে তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। খবর পেয়ে সরকারি পুকুর ভরাট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুকুরটিও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে।