লিচুর দাম কম, হতাশ বিক্রেতারা

ঘড়িতে সকাল সাতটা বাজার আগেই লিচুর আমদানিতে ভরে ওঠে দিনাজপুর শহরের কালীতলা বাজার। এই কালীতলা বাজার দিনাজপুর জেলায় লিচুর সবচেয়ে বড় আড়ত। এরই মধে৵ লিচুর এই বাজারে খুচরা ক্রেতাদের ভিড় লেগে গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় ঠেকাতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। তবে প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় লিচুচাষি ও বিক্রেতারা হতাশ।

সদরের ট্রাফিক পরিদর্শক সাদাকাতুল বারী বলেন, ‘এ বছর একজন সার্জেন্টসহ পাঁচজন ট্রাফিক পুলিশ ওই এলাকায় যানজট নিরসনে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বছর মাত্র দুজন পুলিশ দিয়েই কাজ হতো।’

সরেজমিনে কথা হয় কয়েকজন লিচু ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সঙ্গে। জানা গেল, এবারের লিচুর দাম গত কয়েক বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। প্রতি শ চায়না থ্রি লিচু ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মাদ্রাজি লিচু ১২০ থেকে ১৭০ ও বেদানা লিচু ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। অথচ অন্য বছর চায়না থ্রি লিচু ৫০০ টাকার ওপরে, মাদ্রাজি লিচু ২৫০ টাকার বেশি আর বেদানা লিচুর দাম থাকে ৬০০ টাকার ওপরে।

লিচু বিক্রেতা মো. রাহাত বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমি লিচুর ব্যবসা করতেছি। এবারের মতো কুনবার ব্যবসায় এত মন্দা যায় নাই। তবে ভাই যা-ই বলেন, আমরা তো মরছিই, বাগানওয়ালারা এবার মরে সারা।’

আরেক বিক্রেতা জনি ইসলাম বলেন, ‘আমদানি বেশি। কিন্তু বাইরের পার্টি মাল নেয় কম। এ ছাড়া রমজানের কারণে কাস্টমার কম। এ জন্য বেচাবিক্রিও কম। গেল বছরে আমার লাভ টিকছিল দেড় লাখ টাকা। এবার ৫০ হাজার টাকাও লাভ আসবে কি না, সন্দেহ।’ তার ওপর তিন মাসের জন্য ওই আড়তের ভাড়া দিতে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।

সোলেমান আলী বলেন, ‘রোজার জন্য দাম কমে গেছে। বড় বড় পার্টি ঘুরে যাচ্ছে। আবহাওয়াও অনুকূলে নাই। লিচু খুব দ্রুত পেকে যাচ্ছে। রাস্তার জ্যাম ও গরমের কারণে লিচু অনেক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য পাইকারেরা খুব দেখেশুনে অপেক্ষাকৃত কম পাকা লিচু কিনছে।’ তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর ঈশ্বরদী, রাজশাহী ও যশোর—এই তিন জেলায় এ সময় লিচু শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ওই সব এলাকায় এখনো গাছে লিচু থাকায় সেখানে আমদানি হচ্ছে না।

মো. রিপন বলেন, ‘ভাই, এবার পরিস্থিতি খুব খারাপ, খাওয়ারও পার্টি নাই। গত কয়েক বছরে ব্যবসা বেশ ভালো করছিলাম। গত মৌসুমে আমার লাভ টিকছিল ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। এবার মনে হয়, ১ লাখ টাকাও টিকবে না। তার ওপর আবার ঘর ভাড়া তো আছেই।’

তবে এতে স্থানীয় লোকজন এবার প্রচুর লিচু কিনছেন। একজন নারীকে দেখ গেল ৩০০ লিচু কিনেছেন। তিনি জানালেন, মাত্র ৪০০ টাকায় কিনেছেন এই লিচু। তিনি বলেন, ‘ভাই, আমি অত ধনী মানুষ না। তাই সন্তানদের দামি ফল কিনে খাওয়াইতে পারি না। লিচু দেখলে বাচ্চারা খুব খুশি হবে।’

স্থানীয় আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানান, তিনি ৫০০ বেদানা লিচু কিনেছেন ১ হাজার ৫০০ টাকায়।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, গত বছর ও এ বছরের আবাদ সমান। ৪ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ফলন বেশ ভালো।