পীরগঞ্জে নেক ব্লাস্টে ১০ হাজার বোরো চাষি ক্ষতিগ্রস্ত

চলতি বোরো মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় ব্রি-২৮ জাতের ধানের ফলনে ধস নেমেছে। কৃষি বিভাগ বলছে, এ জাতের ধান ‘নেক ব্লাস্ট’ রোগে আক্রান্ত হয়। ফলে উপজেলার ১০ হাজারের বেশি চাষি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার পীরগঞ্জের ১০টি ইউনিয়নে ৩০ হাজার ৬২৮ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৯৮০ একরে আবাদ হয়েছে ব্রি-২৮ জাতের ধান। অবশিষ্ট জমিতে ব্রি-২৯, পারি ও হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ হয়। ব্রি-২৮ ধানে সবচেয়ে বেশি নেক ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। আগাম আবাদ করা ব্রি-২৯ জাতের ধানেও বিক্ষিপ্তভাবে এ রোগ দেখা দেয়। তবে সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগে তা দমন করা সম্ভব হয়।

উপজেলার ভোমরাদহ গ্রামের আবদুল হক বলেন, ‘মুই দুই বিঘা জমিত ব্রি-২৮ আবাদ করে গত বছর ৮২ মণ ধান পাইচিনু। এইবার ওই জমি থেকে ৪৪ মণ ধান পাইচু। নেক ব্লাস্ট রোগে ধানের শিষলা সাদা হয়ে নষ্ট হয়ে গিচে। কাটা মাড়াই শেষে ধান বেচে খরচলায় উটিলনি।’

উপজেলার ভামদা গ্রামের সহিদুল ইসলামের অবস্থাও একই। এ বছর দেড় বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধানের আবাদ করে ধান পেয়েছেন মাত্র ১৬ মণ। অথচ ধান চাষে তাঁর খরচ হয়েছে ২১ হাজার টাকা। ১৬ মণ ধান বেচে তিনি সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পাবেন। এখন খরচ তুলবেন কীভাবে, আর আগামী মৌসুমের ধান ওঠা পর্যন্ত কী খাবেন, সেই চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না সহিদুলের।

একইভাবে উপজেলার রনশিয়া, থুমনিয়া শাহপাড়া, সেত্রাই, বাঁশগাড়া, শিরাইল, মসলন্দপুর, মল্লিকপুর, কোষা বন্দর, বেতুরা, ঘিডোব ও চাপোড় গ্রামে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ঘুরে চাষির সঙ্গে কথা বলে নেক ব্লাস্টের আক্রমণের কথা জানা গেছে। এসব চাষি বলেছেন, চালের দানা সরু, ফলন বেশি, চাহিদা ও দাম বেশির হওয়ায় তাঁরা এবারও ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেন। কিন্তু ফলন বিপর্যয়ের কারণে তাঁদের বিপদের শেষ নেই। অনেকেই পুঁজি হারিয়ে আসন্ন আমন ধান আবাদের খরচ জোগাবেন কীভাবে, সেই চিন্তায় পড়েছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ পীরগঞ্জে ব্লাস্ট রোগে ফলন বিপর্যয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তাঁর মতে, উপজেলার ১০ হাজারের বেশি ধানচাষি এ রোগে এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি গত শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ব্রি-২৮ জাতে হেক্টরপ্রতি গড় ফলন পাওয়া গিয়েছিল ৩ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন। এবার ব্লাস্ট রোগের কারণে গড় ফলন কমেছে। তবে এখনো ধান কাটা শেষ হয়নি। তাই ক্ষতির সঠিক হিসাব জানতে সপ্তাহখানেক দেরি হবে।