মনিরামপুরে দুই গৃহবধূকে ধর্ষণ, মামলা

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঋষিপল্লির দুই গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার শিকার দুই নারী দুর্বৃত্তদের হুমকির কারণে প্রথমে কোথাও অভিযোগ করেননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হলে গতকাল শুক্রবার দুপুরে তাঁরা পৃথক মামলা করেন। মামলায় কোনো অপরাধীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর রেজাউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে পুলিশ এখনো কিছু জানতে পারেনি। ঘটনার শিকার দুই পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তরা মুখোশ পরা ছিল। তাঁরা কাউকে চিনতে পারেননি। ওসি জানান, দুই নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুই গৃহবধূর একজন এজাহারে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তিনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘরের বারান্দায় শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদসহ কয়েকজন ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে মুখোশধারী সাত-আটজনের একটি সশস্ত্র দল তাঁদের বাড়িতে আসে। সন্ত্রাসীদের দুজন বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা শ্বশুর-শাশুড়িকে আটকে রেখে অন্য তিনজন ঘরের ভেতরে ঢোকে। তারা তাঁর স্বামীকে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। এদের একজন গলায় দা ধরে তাঁকে ধর্ষণ করে। এ কথা কাউকে জানালে বাড়ির সবাইকে খুন করা হবে বলে হুমকি দিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা ঋষিপল্লিতে হানা দিয়ে দুটি পরিবারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। এক গৃহবধূর স্বামী ও শ্বশুরকে বেঁধে নিজের ঘরে এবং অন্যজনকে রাস্তায় নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। দুই বাড়ির দূরত্ব ১০০ ফুটের মতো। তাঁরা সম্পর্কে ননদ-ভাবি।
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পরদিন আমি ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। ধর্ষণের শিকার এক বধূ আমাকে জানান, ধর্ষণের সময়ে দুর্বৃত্তরা বলেছিল, তোরা ভোট দিয়েছিস ক্যান? দুর্বৃত্তদের এ প্রশ্নের জবাবে গৃহবধূ বলেছিলেন, “ভোট দিলি তো হাতে কালির দাগ থাকবে। দেখেন, কালির কোনো দাগ নেই। আমরা ভোট দেইনি।” তার পরও দুর্বৃত্তরা নিবৃত্ত হয়নি।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মনিরামপুর উপজেলা সদর থেকেই ১৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে ঋষিপল্লিটি অবস্থিত। এ পল্লিতে ১৬০টি হিন্দু পরিবার বাস করে। এরা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ, কেউ জুতা-স্যান্ডেল সেলাই করেন, কেই ঝুড়ি-ঝাঁকা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নির্বাচনের পর থেকেই ওই এলাকার মানুষ আতঙ্কে ছিল। ধর্ষণের ঘটনার পরপরই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। কিন্তু ভয়ে এলাকার লোকজন মুখ খুলছিল না। শেষ পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়ার পর সবাই মুখ খোলে। এলাকায় এখন পুলিশ পাহারা রয়েছে।