আংশিক ব্রিটিশ সহায়তা হারাতে পারে বাংলাদেশ

নির্বাচন ঘিরে সহিংসতাসহ চলমান রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি কর্মসূচির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আংশিক ব্রিটিশ আর্থিক সহায়তা হারাতে পারে বাংলাদেশ। ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের মুখপাত্র ওয়ারেন ডালির বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি কর্মসূচিতে সাড়ে পাঁচ কোটি পাউন্ডের বেশি আর্থিক সহায়তা দেয় যুক্তরাজ্য। এই দুটি প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা কমানোর বিষয়টিই দেশটি পর্যালোচনা করবে।

যে দুটি প্রকল্প পর্যালোচনা করা হবে এর একটি হলো প্রমোটিং ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড প্র্যাকটিসেস। এটি চালায় এশিয়া ফাউন্ডেশন। এই কর্মসূচির প্রধান দুটি লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সংসদের কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতার উন্নতি সাধন। এটি সাংসদদের আরও ভালো তথ্য সরবরাহে এবং আইনপ্রণেতা হিসেবে প্রতিনিধিত্ব ও সতর্ক পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা পূরণে তাঁদের সঙ্গে কাজ করছে।

অপর প্রকল্পটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে বিশ্বব্যাংক থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে আর্থিক বাজেট ও সরকারি নিরীক্ষাজনিত সংসদীয় ঘাটতি দূর করতে কাজ করা হয়। 

ইউকে এইড জাতীয় সংসদ-সংশ্লিষ্ট পাঁচ বছর মেয়াদি দুটি প্রকল্পের ব্যয় ধরেছে  পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ পাউন্ড। এই বছর ও আগামী বছর প্রকল্প দুটিতে ব্যয়ের জন্য অর্থ আছে এক কোটি ২০ লাখ পাউন্ড। ব্যয় করা অর্থের পুরোটা সংসদীয় কর্মকাণ্ডের পেছনে ব্যয় হয়নি।

ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের মুখপাত্র ওয়ারেন ডালি বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সংসদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ওই কর্মসূচি দুটি পর্যালোচনা করছে যুক্তরাজ্য। তারা খতিয়ে দেখছে সামনে এগিয়ে যেতে এ পরিস্থিতির সঙ্গে কর্মসূচির কোন দিকটি সংগতিপূর্ণ হবে।

‘টেলিগ্রাফ’-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি যে ১৪৭টি আসনে নির্বাচন হয়েছে, এর বেশির ভাগই ছিল প্রতীকী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ফলাফল আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকবে, অভিযোগ তুলে প্রধান বিরোধী দলগুলো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। তারা ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

নির্বাচনের পরপরই যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র বিভাগের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী বেরোনেস ওয়ারসি এক বিবৃতিতে তাঁর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অর্ধেকের বেশি আসনের ভোটাররা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাননি এবং অধিকাংশ আসনে ভোটের হার ছিল খুবই কম। 

বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে বৈদেশিক সহায়তা পায় তার মধ্যে যুক্তরাজ্য চতুর্থ অবস্থানে আছে। দেশটি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৭ কোটি ৪৯ লাখ পাউন্ড আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে তা কমিয়ে সাড়ে ২৬ কোটি পাউন্ড করার পরিকল্পনা আছে।

যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তার বেশির ভাগই যায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ৩০ ভাগ সহায়তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হয়। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্রিটিশ সরকার প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। নতুন যে সংসদ হতে যাচ্ছে, তা সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে সঠিক। তবে এর রাজনৈতিক, নৈতিক ও জনসমর্থন নেই এবং সংসদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।  

ব্যাখ্যা: যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে উদ্ধৃত করে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এ প্রতিবেদন সম্পর্কে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ই মেইলে তাঁর বক্তব্য জানান। বক্তব্যটি হলো: দাতা সংস্থাগুলো সংসদকে যে সহায়তা দিয়ে আসছে তা অব্যাহত রাখার বিষয়টি যদি তারা পুনর্বিবেচনা করে তাহলেও আমি আশ্চর্য হব না। সাংবিধানিক অথবা আইনগত দিক থেকে এই সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও রাজনৈতিকভাবে ও জনগণের সমর্থন প্রশ্নে এ নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাবে। আবার সহায়তা প্রত্যাহারের বদলে দাতাগোষ্ঠী কার্যকর সংসদের দাবির পক্ষে সহযোগিতা দিতে পারে।

একইভাবে, সরকারকে দেওয়া তাদের সহায়তা পেশাগত সক্ষমতা এবং বর্তমানে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা আইনের শাসন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে।