আকাশপথে ঈদের টিকিট শবে বরাতের আগেই শেষ

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

ঈদের ২০ দিন এখনো বাকি। কিন্তু আকাশপথে ২২ থেকে ২৫ জুনের টিকিট গত মে মাসে শবে বরাতের আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। টিকিটের চাহিদা থাকায় বেশ কিছু রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট দিচ্ছে বিমান সংস্থাগুলো। তবে এ জন্য প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা, নভো এয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে চলাচল করে বিমান ও ইউএস বাংলা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যাতায়াত করে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। নভো এয়ার ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, কক্সবাজার ও সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজ।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম জানান, প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা ছাড়েন দুই হাজার বিমানযাত্রী। ঈদে যাত্রীসংখ্যা অনেক বেশি হবে।
এবার রোজা ২৯টি হলে ঈদের সম্ভাব্য দিন ২৬ জুন। ৩০টি রোজা হলে পরদিন ২৭ জুন ঈদ হবে। ঈদ যেদিন হোক, ২২ জুন বৃহস্পতিবার হবে শেষ কর্মদিবস। তাই সেদিন টিকিটের চাহিদা বেশি।
বিমান, ইউএস বাংলা, নভো এয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২২ থেকে ২৫ জুন এই চার দিনের টিকিটের চাহিদা বেশি। এসব রুটের নিয়মিত ফ্লাইটের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তাই বেশ কিছু রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। সব মিলিয়ে ঈদের আগের চার দিনে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী আকাশপথে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন।

noname
noname

বাংলাদেশ বিমান এবার ২২ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে ছয়টি রুটে অতিরিক্তসহ মোট ২৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। বিমানের জনসংযোগ শাখার তথ্য অনুযায়ী, এসব ফ্লাইটে আসনসংখ্যা ২ হাজার ১০০। ঈদের জন্য ঢাকা থেকে যশোরে ২২ ও ২৪ জুন দুটি এবং ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে ২৩ জুন একটি অতিরিক্ত ফ্লাইট চলবে। অন্যান্য গন্তব্যে নিয়মিত ফ্লাইটই থাকছে।
ইউএস বাংলার উপমহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) কামরুল ইসলাম জানান, ২২ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন যশোর রুটে তাঁদের নিয়মিত দুটি ফ্লাইট ছাড়াও অতিরিক্ত দুটি ফ্লাইট চলবে। এ সময় সৈয়দপুরে অতিরিক্ত একটি ফ্লাইট থাকছে। রাজশাহী ও বরিশালে দুটি করে অতিরিক্ত ফ্লাইট দেওয়া হবে ঈদের আগের চার দিন। এ ছাড়া ঈদের পরে কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন অতিরিক্ত তিন থেকে চারটি ফ্লাইট থাকছে।
নভো এয়ার ২২ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত প্রতিদিন যশোর ও সৈয়দপুর রুটে একটি অতিরিক্ত ফ্লাইটসহ মোট তিনটি ফ্লাইট রেখেছে।
টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু এক বছর আগে: দেশের বিমান সংস্থাগুলো ঈদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলো সামনে রেখে প্রায় এক বছর আগে থেকে টিকিট বিক্রির কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। তাদের মতে, ঈদের সময় সবারই জানা থাকে। এক দিন এদিক-ওদিক হতে পারে। তাই টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে যায় আগেভাগেই। ঈদের সময় প্রবাসীরা দেশে আসেন। তাঁরাও অগ্রিম টিকিট কিনে নেন। এরই অংশ হিসেবে অনলাইনে অগ্রিম টিকিট বুকিং নেওয়া হয়। যাত্রীরা সুবিধাজনক সময়ে বিমান সংস্থাগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র ও বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট কিনে থাকেন। এ ছাড়া অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট কিনে থাকেন অনেক যাত্রী।
অভ্যন্তরীণ রুটে বাংলাদেশ বিমানের ২২ থেকে ২৫ জুনের নিয়মিত ফ্লাইটগুলোর টিকিট তিন মাস আগে বিক্রি হয়ে গেছে। নভো এয়ারের এই চার দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে শবে বরাতের আগে। নভো এয়ারের ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) এ কে এম মাহফুজুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ঈদের টিকিটগুলো তিন সপ্তাহেরও বেশি আগে বিক্রি হয়ে গেছে। যাত্রীরা যানজটসহ ঝামেলা এড়াতে আকাশপথকে বেছে নেন। দীর্ঘ ছুটি হলে বাস-ট্রেনকে বেছে নেন। তাই ঈদের পর দীর্ঘ ছুটি হলে অবশ্য ফিরতি পথে যাত্রীর চাপ কমে যাবে।
শুধু ঈদুল ফিতর নয়, ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রিও প্রায় শেষের পথে। একইভাবে রিজেন্ট ও ইউএস বাংলার টিকিট বিক্রি হয়েছে। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আখতার ইউ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট থাকছে না। তবে এ সময় এই রুটগুলোতে আমাদের বড় এয়ারক্রাফট চলবে।’

noname
noname

অতিরিক্ত ফ্লাইটের ভাড়া দ্বিগুণ: ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে শুরু হয়। কিন্তু ঈদে অতিরিক্ত ফ্লাইটে প্রতিটি টিকিটের জন্য একজন যাত্রীকে গুনতে হবে ৭ হাজার টাকা। সৈয়দপুর রুটে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২০০ টাকা। একইভাবে অন্যান্য বিমান সংস্থার ভাড়াও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যাত্রীর চাহিদা ও ফিরতি পথে যাত্রী কম থাকা ভাড়া বৃদ্ধির কারণ—এ কথা জানিয়ে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে চাহিদা থাকলে মূল্যও বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া ঢাকা থেকে যাত্রী পূর্ণ থাকলেও, ফিরতি পথে উড়োজাহাজগুলোতে আসন ফাঁকাই থাকে। আসলে মুনাফা বলতে তেমন কিছুই হয় না।
একই কথা জানিয়ে ইউএস বাংলার উপমহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, চাহিদা বেশি থাকায় কম মূল্যে বা লো অফারে কখনোই টিকিট মিলবে না। হিসাবের সময় ফিরতি ফ্লাইটের হিসাবটাও থাকে।