সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বিশেষ আইনের দাবি

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ শনিবার রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল হয়েছে। সমাবেশ থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার ও তাদের নিরাপত্তায় বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবি তোলা হয়।

সারা দেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ যৌথভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের আয়োজন করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোক এতে যোগ দেন।
শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের পর বিক্ষোভকারীরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল করেন। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে পল্টন মোড় ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। আজ বিভিন্ন সময় সারা দেশেই এ কর্মসূচি পালিত হয়।
শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাংসদ ঊষাতন তালুকদার।
সমাবেশে নির্বাচনের পরে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কেনো সতর্ক থাকল না, নির্বাচন কমিশন কী দায়িত্ব পালন করল—এসব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। সমাবেশে সংহতি প্রকাশকারীরা নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘুদের পুনর্বাসনেরও দাবি জানান। সবার হাতে কালো পতাকার পাশাপাশি অনেকের হাতে লাল-সবুজের বাংলাদেশের পতাকাও ছিল। নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা জড়ো হতে থাকেন শহীদ মিনারে।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নির্বাচনে হেরে গেলে সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালায়। ২০০১ সালে নির্বাচনে জেতার পরও তারা নির্যাতন চালিয়েছিল।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। সন্ত্রাস দমন আইন সংশোধন করে সাম্প্রদায়িক অপরাধে অপরাধীদের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে হবে। দ্রুত বিচার আইনে বিচার করতে হবে। পুলিশকেই এসব মামলা করতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
নিজেরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য দাঁড়াবেন কি না, জামায়াত-রাজাকার থাকবে না আমরা থাকব—সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মাইকে এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনারে উপস্থিত জনতা কালো পতাকা তুলে ধরে সংহতি প্রকাশ করেন।
সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হলেও রাষ্ট্র তার বিচার করেছে, এ ধরনের নজির নেই। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি বা দুঃখ প্রকাশ করেনি। রাতের অন্ধকারে যারা হামলা চালায় তাদেরকেই সংখ্যালঘু হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, ‘এ দেশে থেকেও সংখ্যালঘুরা পরবাসী। এ কোন বাংলাদেশ! ৩০ লাখ শহীদকে আমরা কী জবাব দেব। বাংলাদেশকে রক্ষার জন্যই সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুরা আস্থাহীনতায় ভুগছে। প্রধানমন্ত্রীকেই এই আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বিশেষ আইন করতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ধরনের আক্রমণ শুধু সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নয়, সমগ্র জাতির ওপরই নির্যাতন। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এ নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সমাবেশে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অশোক সরকার, নিতাই ঘোষ, নিমচন্দ্র ভৌমিক, সুব্রত চৌধুরী, মাসুদ কামাল, মনীন্দ্র কুমার নাথ, নির্মল চ্যাটার্জি, রঞ্জন কর্মকার, ভাস্কর চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ও বক্তব্য রেখে সংহতি প্রকাশ করেন।

অন্যান্য: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ আজ এক যৌথ বিবৃতিতে যশোরের মনিরামপুরে ঋষিপল্লির দুই সংখ্যালঘু গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবকো সরেন এক বিবৃতিতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করে বলেন, কোনো সরকারই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি।